নিজের বৈশিষ্ট্যে ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানী
১৭ জুন ২০২০দেখলে মনে ভয় জাগে বৈকি৷ আর সেটাই তো উদ্দেশ্য৷ স্ভোনজারি বা বেল ভাইব্রেটার শীতকালে সব অশুভ শক্তি তাড়িয়ে দেয়৷ ইউরোপের দশটি দেশের মানুষ রিয়েকার কাছে চাভলে এলাকার কার্নিভালে অংশ নিতে এসেছেন৷
চারিদিকে প্রাণীর মাথার খুলি, আসল চামড়া ও লোম প্রাচীন যুগের পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ ঘণ্টাবাদক হিসেবে ইভো কোভাচ জানিয়ে দেন, ‘‘আমরা নিজেরাই সব কস্টিউম তৈরি করি – এমনকি ঘণ্টাও৷ শুধু পশুর চামড়া কিনতে হয়৷ তারপর আঠা দিয়ে শিরস্ত্রাণে লাগানো হয়৷’’
২০২০ সালে ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে রিয়েকা৷ এককালের গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর ও শিল্পকেন্দ্র সংস্কৃতির মাধ্যমে নতুন এক পরিচয় তুলে ধরতে চায়৷ শহরের কেন্দ্রস্থলেই বন্দর অবস্থিত৷ হাব্সবুর্গ সাম্রাজ্যের জাঁকজমকপূর্ণ ভবনগুলিও সেখানেই দেখা যায়৷ তার ঠিক পেছনে সমাজতন্ত্রের আমলের একঘেয়ে বহুতল ভবনগুলি এখনো দেখা যায়৷ ক্রোয়েশিয়ার এই শহরের মেজাজ বন্দর এলাকায় সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়৷ শহরের গাইড তানিয়া স্মোইয়ে বলেন, ‘‘আমার এই দৃশ্য দারুণ লাগে৷ সমুদ্রও ভালো লাগে৷ শহরের প্রতীক হিসেবে ক্রেনগুলিও পছন্দ করি৷ বিখ্যাত এই বন্দর চিরকাল নতুনকে স্বাগত জানিয়েছে৷ সে কারণে সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ হয়েছে৷ ইউরোপীয় সংস্কৃতিও সেই ভূমিকাই নিচ্ছে৷’’
তানিয়া আসলে পেশায় অভিনেতা৷ ‘রিয়েকা ২০২০’ উপলক্ষ্যে তিনি শহরে বিকল্প ধারার নানা ট্যুর পরিচালনা করছেন৷ সবার আগে শহরের পুরানো অংশে ঢুঁ মারতে হয়৷ এককালে সেখানে রোমানদের ডেরা ছিল৷ আসলে রোমান সাম্রাজ্যের সৈন্যরা সেখানে থাকতো৷ অনেক যুগ কেটে গেলেও দূরবিনের সাহায্যে কার্যত অতীত কালে উঁকি মারা যায়৷ তানিয়া বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আমাদের জন্য এই সুযোগ খুলে দেওয়া হয়েছে৷ তারপর থেকে সেখানে কিছু সংগীতের অনুষ্ঠান ও নাটক আয়োজিত হয়েছে৷ আমিও এখানে ‘ডন কিখোতে' নাটকে অভিনয় করেছি৷’’
এককালের সবচেয়ে বড় কাগজ কারখানার যাঁতাকাল এখন ফোয়ারার ভাস্কর্যে পরিণত হয়েছে৷ রিয়েকা শহরে পরিবর্তনই মূলমন্ত্র৷ শহরের সর্বত্র বিভিন্ন যুগের ইতিহাসের ছাপ ছড়িয়ে রয়েছে৷ তবে পায়ে হেঁটেই সবকিছু ঘুরে দেখা যায়৷
ডান দিকে পুলিশ থানা, বামে কারাগার আর মাঝে একটি গির্জা৷ সত্যি অদ্ভুত এক মেলবন্ধন৷ তানিয়া স্মোইয়ে জায়গাটির বিশেষত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘‘এই জায়গাটির সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো, জেলের কয়দির স্ত্রীরা এখানে এসে যেন বাতাসেই স্বামীদের চিঠি লিখতো৷ নীচে থেকে উপরে সেই বার্তা পাঠানো হতো৷’’
রিয়েকা অনেকটা এই আর্ট ইনস্টলেশনের মতো৷ এর কিছু অংশ রঙিন, কিছু অংশে জং ধরে গেছে৷ এটি আসলে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ৷ তানিয়া জানান, ‘‘তাঁর নাম ভোইয়ো রাদোইচিচ৷ তিনি এই ছবি সৃষ্টি করেছেন৷ তাঁর সৃষ্টিকর্ম সব সময়ে আমাদের মন খুশি করে দেয়৷ শিশুসুলভ বলে আমাদের ভালো লাগে৷ জাহাজ তাঁর বেশ পছন্দের মোটিফ৷ তাতে অনেক রং ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ যেন রিয়েকার বৈচিত্র্যের প্রতীক৷’’
‘ইউরোপিয়ান ক্যাপিটাল অফ কালচার’ হিসেবে রিয়েকা এই বৈচিত্র্য ছড়িয়ে দিতে চায়৷ ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আভঁগার্দ শিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভিন্ন পাড়ায়ও কিছু প্রকল্প চালানো হচ্ছে৷ তবে সবার আগে ভালো করে কার্নিভাল উৎসব পালন করতে হবে৷
আন্দ্রেয়া কাসিস্কে/এসবি