নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি
৬ মে ২০২৩দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংকটে নানা শ্রেণির মানুষ৷ রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে যেকোনো সবজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা৷ চিনি নিয়ে অস্বস্তি তো আছেই৷ ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে৷ স্বস্তির খবর নেই কোনো পণ্যেই৷
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে৷ এপ্রিলে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক দুই-চার শতাংশে৷ যেখানে আগের মাসে ছিল নয় দশমিক তিন-তিন শতাংশ৷ মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক শুন্য-নয় শতাংশ৷ এই হার এপ্রিলে নয় শতাংশের নিচে নেমে এসেছে৷
কীভাবে সামাল দিচ্ছেন মানুষ
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাহারি সবজিতে বাজার ভরপুর থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে৷ এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা৷ বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৭০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে৷ আর প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত৷ শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আজিজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সবজির দাম আগে থেকে বাড়তি৷ আমাদের পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হয়৷ বাজারে পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম৷ সবজির দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর, সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে৷”
মসলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজ এবং আদার দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দশ থেকে কুড়ি টাকা বেড়েছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ৷ বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিছু খরচে তো আর আমাদের হাত নেই৷ যেমন বাচ্চারের স্কুলের খরচ৷ সেগুলো তো করতেই হচ্ছে৷” নির্দিষ্ট আয়ে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন? জানতে চাইলে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, "আগে যেখানে মাসে একবার বা দুইবার গরুর মাংস কিনতাম, এখন কয়েক মাস হলো কিনিই না৷ কারণ ৮০০ টাকা কেজি৷ আবার বাজারে গিয়ে টমেটো বা শশা কিনি না, যেসব সবজির দাম কম সেগুলো কিনি৷ আগে যেসব মাছ কিনতাম, এখন আর সেগুলো কিনছি না৷ যেগুলোর দাম কম, শুধু সেই মাছ কিনছি৷ মুরগি কিনি না, ডিম দিয়েই প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছি৷ এভাবেই আসলে আয়ের মধ্যে রাখতে হচ্ছে মাসের খরচ৷”
তবু মূল্যস্ফীতির হার কেন কমছে?
গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে৷ এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিই ছিল সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ৷ আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ৷ মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে৷ তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগের মাসের মতোই রয়েছে৷ কেউ কেউ বলছেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কারণেই মূলত গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় খানিকটা কমেছে৷ মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ৷ এই হার এপ্রিলে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ৷
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যেও খাদ্য মূল্যেস্ফীতি কীভাবে কমছে? জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবগুলো খাদ্যপণ্য মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে না৷ বিশেষ করে চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে৷ কিন্তু কয়েক মাস ধরে চালের দাম স্থিতিশীল৷ এমন কী কোনো ক্ষেত্রে কমেছেও৷ যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে, এগুলো মূলত আমদানি পণ্য৷ যেমন তেল, চিনি, পেঁয়াজ৷ এগুলো খুব বেশি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে না৷ এ কারণে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে৷''
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন বর্তমান বাজারমূল্যে সব শ্রেণীর মানুষের উপর প্রভাবটা সমান নয়৷ তিনি বলেন, "তিন শ্রেণির ভোক্তা আছে৷ একটা শ্রেণির হাতে অনেক অর্থ৷ তারা বাজার করার পরও প্রচুর অর্থ তাদের হাতে থাকে৷ আরেকটা শ্রেণির হাতে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে৷ সেই অর্থ দিয়ে তারা বাজার করছে৷ আরেকটা শ্রেণি আছে যারা সব সময় ঘাটতিতে থাকেন৷ এই শ্রেণিটা প্রচন্ড চাপে আছে৷ এই শ্রেণির মধ্যে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ বেশি, বিশেষ করে চাকরিজীবী৷ যেমন একজন রিক্সাচালক এমন পরিস্থিতিতে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নিচ্ছেন৷ টং দোকানিও চায়ের দাম একটু বাড়িয়ে নিচ্ছেন৷ কিন্তু নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ সেটা পারছেন না৷ ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন৷”
মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...