নির্বাচনী প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের, শরিক নিয়ে আন্দোলনে বিএনপি
১ এপ্রিল ২০২৩বৃহস্পতিবার জোটের বৈঠকে নেতারা বলেছেন, বিএনপি আসুক, না আসুক নির্বাচন হবে।
অন্যদিকে এখনই নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না বিএনপি। তাদের নেতৃত্বাধীন কোনো জোট না থাকলেও সমমনা দলগুলোকে দিয়ে বিএনপি একাধিক জোট গঠন করেছে। তারা একসঙ্গে যুগ্ম আন্দোলনে রয়েছে। তারা বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। ফলে এখন তাদের একদফা দাবি, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় সরকার গঠন করা। পাশাপাশি বিএনপি নেতারা এও বলছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখন নয় মাসের মতো বাকি আছে। ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন। শুনছেন জেলা নেতাদের কথা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢাকায় আট সাংগঠনিক জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জেলা নেতাদের কথা শোনার পাশাপাশি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী গাইডলাইন দেন। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ জুন গণভবনে আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় দেশের সব জেলা, মহানগর কমিটির ১০ থেকে ১৫ জন করে নেতাকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভায় তৃণমূলের নেতারা জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন না দিতে শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এরপর গত চার বছরের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এবারের সভাটি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার অংশ হিসেবে জেলা নেতাদের গণভবনে ডাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে যখন দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্রও চলছে। সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কীভাবে মোকাবিলা করা হবে সে দিকনির্দেশনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী।”
গত বৃহম্পতিবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় বৈঠকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন দেখতে চায়, আমরাও দেখতে চাই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে অস্ত্র দিয়ে রক্তের হোলি খেলা করেছে।” জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, "সামরিক শাসনের ঔরসে জন্মলাভ করা বিএনপি ও একাত্তরের রাজাকার জামায়াত, এ দুই রাজাকারের সরকার গঠনের প্রস্তাব মহাবিপদ ও অশনিসংকেত। তাদের এক চুলও ছাড় দেব না।” সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, "৯ মাস পরে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে বিদেশে বসে যড়যন্ত্র চলছে।”
অন্যদিকে আন্দোলনেই সমাধান খুঁজছে বিএনপি। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। বিএনপি অত্যন্ত সংগঠিত একটা দল। ফলে নির্দলীয় সরকার এলে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বেশি সময় লাগবে না। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই আছে। এখন আমরা আন্দোলনের পথেই আছি।”
বিএনপি এখনও কোনো জোট গঠন না করলেও সমমনা দলগুলোকে দিয়ে কয়েকটি জোট তৈরী করেছে। তারা একসঙ্গে যুগ্ম আন্দোলন করছে। গত জানুয়ারিতে বিএনপির সঙ্গে যুগ্ম আন্দোলনে অংশ নিতে বিএনপির মধ্যস্থতায় ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট' নামে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নতুন জোটের ঘোষণা দেন। এই জোটের প্রধান ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান। এর আগে গত ডিসেম্বরে গঠিত হয় ১২ দলীয় জোট। এই জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বীরপ্রতীক।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বীরপ্রতীক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা এখন বিএনপির সঙ্গে যুগ্ম আন্দোলনে আছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমাদের জোট অংশ নেবে না। আমরা নির্দলীয় সরকার গঠনের পরই নির্বাচনে যাব। শনিবার বিএনপি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। আমরাও বিজয়নগরে এই কর্মসূচি পালন করেছি। আরও বেশ কয়েকটি জোট তাদের মতো কর্মসূচি পালন করেছে।”
গত বছরের আগস্টে আত্মপ্রকাশ করে সাত দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ'। এই জোটের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখন তো নির্বাচনের পরিবেশ নেই। নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না। ফলে নির্বাচন নিয়ে এখনই আমরা কিছু ভাবছি না। কারণ নতুন একটা সরকার এলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। পরিবর্তিত পারিস্থতিতে কী হবে, সেটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। সেই সরকার তিন মাসের জন্য হবে না, তিন বছরের জন্য হবে সেটা তো আমরা কেউ জানি না। ফলে নির্বাচন নিয়ে চিন্তার সময় এখনও আসেনি।''
গত ডিসেম্বরে ১১ দলীয় আরেকটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই জোটের নেতারাও বিএনপির সঙ্গে যুগপদ আন্দোলনে রয়েছেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ রয়েছেন এই জোটের নেতৃত্বে। তিনি বলেন, "দেশে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার পরই আমরা নির্বাচনে যাব।”
তবে জাতীয় পার্টি এখনও নিজেদের করণীয় ঠিক করেনি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা চাই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও আমরা জানিয়ে আসছি। কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যে ভোট চলে এলে আমরা সেই ভোটে অংশগ্রহণ করবো।”
তবে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা চাই একটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট হোক। আমরা এই নির্বাচনী ব্যবস্থারই পরিবর্তন চাই। যতদিন পর্যন্ত এটার পরিবর্তন না হচ্ছে ততদিন আমরা আমাদের কণ্ঠ সরব রাখব।”