নির্বাচনে কারচুপি করা এত সহজ!
১১ নভেম্বর ২০১৮মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দিয়েছেন৷ প্রায় ২০টি রাজ্যে ‘অ্যাকুভোট টিএস' এবং ‘টিএসএক্স' নামক ভোটিং মেশিন ব্যবহৃত হয়েছে৷ অথচ এসব মেশিন যে কতটা অরক্ষিত তা কয়েকবারই করে দেখিয়েছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স হেল্ডারম্যান৷ মার্কিন কংগ্রেসকেও তিনি এই বিষয়টি জানিয়েছিলেন৷
২০০০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জ বুশ খুবই অল্প ব্যবধানে আল গোরকে হারিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেইসময় ব্যবহৃত হওয়া কার্ড সিস্টেম-এ ভোট দিতে গিয়ে ফ্লরিডায় এক লক্ষেরও বেশি ভোট বাতিল করতে হয়েছিল৷ তাছাড়া ভোটের ফল পেতে ৩৬ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷
সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার সিস্টেম চালু করা হয়৷
১০ মিনিটেই হ্যাক!
বিশ্বের হ্যাকারদের এক অন্যতম মেলা ‘ডেফকন ২৬'৷ গত আগস্টে লাস ভেগাসে এটি অনুষ্ঠিত হয়৷ আয়োজকরা তরুণ হ্যাকারদের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল৷ কে, কত কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট হ্যাক করতে পারে, তা নির্ধারণ করা ছিল ঐ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য৷ এ জন্য ফ্লরিডা, আইওয়া, মিশিগান, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ওহিও, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিন রাজ্যের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের ‘কপি' বা নকল তৈরি করা হয়েছিল৷
১১ বছরের অদ্রে জোন্স মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে এ সব ওয়েবসাইটের একটি পাতায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়েছিল৷ সেখানে সে তার ইচ্ছেমত প্রার্থীর নাম ও ভোটের সংখ্যা পরিবর্তন করতে পারত৷ আয়োজকরা জানান, ৩০ জনের বেশি শিশু আধ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করতে পেরেছিল৷
ইউরোপে হুমকি
শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রান-অফের কিছুক্ষণ আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দলের কয়েক হাজার গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিল৷
এদিকে, জার্মানির ডার্মস্টাটের মার্টিন চিরজিশ নামে কম্পিউটার বিজ্ঞানের এর শিক্ষার্থী গতবছর জার্মান নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নে ব্যবহত সফটওয়্যারের দূর্বলতা তুলে ধরেছিলেন৷ ‘পিসি-ভাল' নামের ঐ সফটওয়্যারের পাসওয়ার্ড তিনি অনলাইনে খুঁজে পেয়েছিলেন৷ ঐ সফটওয়্যারের কোড-এও তিনি প্রবেশ করতে পেরেছিলেন৷ পরবর্তীতে চিরজিশ এই দূর্বলতার কথা নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে জানালে ঐ সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে সরে আসে তারা৷
অ্যানালগের বিকল্প নেই!
প্রায় সফটওয়্যারই আগে কিংবা পরে হ্যাক করা সম্ভব৷ তাই মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক হেল্ডারম্যান বলেন, এই ডিজিটাল যুগেও অ্যানালগ পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অ্যানালগ পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেছেন৷ ‘‘এটি পুরনো ফ্যাশনের৷ কিন্তু কাগজপত্রের মাধ্যমে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকা সব সময়ই ভালো,'' বলেন তিনি৷
গত বছরের এই ছবিঘরটি দেখুন
আলেক্সান্ডার ফ্রয়েন্ড/জেডএইচ