ন্যানো প্রযুক্তির নতুন উপহার বিশ্বের ক্ষুদ্রতম গাড়ি
২১ নভেম্বর ২০১১গ্রিক ভাষায় ‘ন্যানো’ কথাটির অর্থ হলো ‘বামন’৷ অথচ এই বামনগাড়ির কার্যপদ্ধতি অন্যান্য সাধারণ বিদুৎচালিত গাড়ির থেকে কিছু কম নয়৷ জানালেন নেদারল্যান্ডস-এর গ্রনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেন ফেরিঙ্গা৷ সম্প্রতি ‘ব্রিটিশ সাইন্টিফিক জর্নাল অব নেচার’-এ ফেরিঙ্গা’র গবেষণা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷ আর সেখান থেকেই জানা গেছে যে, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই গাড়িটি ফোর-হুইল ড্রাইভ৷ শুধু তাই নয়, গাড়িটি চালাতে নাকি বাইরের শক্তির প্রয়োজন হয় না৷ অর্থাৎ, এটা সত্যিকার অর্থে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘অটোম্যাটিক’ গাড়ি৷
বিজ্ঞানী ফেরিঙ্গা জানান, ‘‘১০টি হাইড্রোজেন পরমাণু পর পর রাখলে, সেটা এক ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের সমান হয়৷ যা খালি চোখে দেখা যায় না৷ অর্থাৎ, ন্যানো স্কেলে তৈরি যে কোনো জিনিসই খুব ছোট৷ তাই আমাদের চেষ্টা ছিল এমন একটি ‘মোটর’ তৈরি করা – যা ছোট হলেও, তার অংশগুলি হবে বেশি কার্যকর এবং সংবেদনশীল৷’’
এর জন্য চারটি ‘মলিকিউলার মোটর’-কে গাড়ির চার-চাকা হিসেবে ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা৷ যাতে করে, চারটি চাকাই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারে৷ হয়েছেও তাই৷ এই প্রথম, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ‘ফিড’ করা থাকলে, নিজে থেকেই চলতে পারছে গাড়িটি৷ ফেরিঙ্গা জানিয়েছেন, তামার একটি পাতের ওপর প্রায় ছয় ন্যানোমিটার দূরত্ব নিজে থেকেই পার করেছে এই বামনগাড়ি৷ নিখুঁত সরলরেখায় সামনের দিকে এগিয়ে গেছে৷
অবশ্য ঐ পর্যন্তই৷ কারণ, গাড়িটি চলা শিখলেও, সামনের দিকে যাওয়ার সময় তার সবগুলি চাকা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে শেখেনি এখনও৷ এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা এ সমস্যা সমাধানেরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
তবে তারপরও, এই গবেষণাকে সফল হিসেবেই ধরা হচ্ছে৷ কারণ, ন্যানো প্রযুক্তিকে ঠিক এভাবে কাজে লাগিয়ে সেলফোন, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক গাড়ি – ইত্যাদি সবরকম ইলেক্ট্রনিক পণ্য দ্রুত চার্জ করা সম্ভব হতে পারে৷ এমনকি, তার জন্য পণ্যগুলির সামনে উপস্থিত থাকারও প্রয়োজন পড়বে না৷ পুরো ঘটনাটাই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে৷
বলাই বাহুল্য, আকারে অতি মাত্রায় ছোট হওয়ায় বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স, আলোকবিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি৷ গবেষক বেন ফেরিঙ্গা’র কথায়, ‘‘ক্ষুদ্র প্রযুক্তিই দেবে শক্তির বড় সমাধান’’৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক