1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে পাঠ্যবই ‘ইসলামিকরণের' উদ্যোগ

২৬ মে ২০২১

শিক্ষাব্যবস্থা একমুখি করার উদ্যোগ নিয়েছে ইমরান খানের সরকার৷ তবে সমালোচকরা এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ পদক্ষেপে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

https://p.dw.com/p/3tzZq
Weltspiegel 02.02.2021 | Pakistan Peschawar | Schüler mit Maske
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance

১৯৪৭ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের কয়েক বছর পর থেকেই পাকিস্তানে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার উদ্যোগ শুরু হয়৷ এই প্রবণতা ১৯৫০-এর দশকে কিছুটা বেড়ে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ক্রমান্বয়ে আরো বাড়তে থাকলেও ১৯৮০-র দশকে সামরিক শাসক জিয়াউল হকের সময়ে তা ব্যাপকতা পায়৷ ১৯৮৮ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বৈরশাসক জিয়াউল হক পাঠক্রমের ‘ইসলামিকরণই' শুধু করেননি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইসলামি আইন কার্যকর করেছেন, বিচারবিভাগে, সরকারি চাকুরিতে ইসলামপন্থিদের নিয়োগ দিয়েছেন, সারা দেশে ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠানও গড়েছেন কয়েক হাজার৷

তবে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের দাবিও বরাবরই উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই মুসলিম প্রধান দেশটিতে৷ বহুমুখি শিক্ষাব্যবস্থাকে একমুখি করার দাবিও উঠেছে বারবার৷

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই ইনসাফ ২০১৮ সালে শিক্ষাব্যবস্থাকে একমুখি করার অঙ্গীকার করে৷ আশা করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলার মতো চলতি বিশ্বের জন্য অধিকতর প্রযোজ্য বিষয়গুলোর গুরুত্ব বাড়বে৷ কিন্তু ২০১৯ সালে ইমরান খান সরকার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করে, তাতে ধরা পড়ে উল্টোচিত্র৷ দেখা যায়, পাশ্চাত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত সাবেক ক্রিকেটার ও ‘প্লেবয়' ইমরান খান পাঠক্রমে ধর্মের প্রভাব আরো বাড়ানোর পথেই হাঁটছেন৷ করোনা সংকটের কারণে এতদিন নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘একমুখি' করার কাজ দৃশ্যত শুরু হয়নি৷

তবে অচিরেই সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই ছাপার কাজ শেষ৷ সেখানে ইংরেজি, উর্দু, সামাজিক শিক্ষাসহ সব বিষয়েই ইসলামিকরণের জোর প্রয়াস দেখতে পাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা৷

জানা গেছে, প্রথম ধাপে প্রাথমিক শিক্ষায় মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরান পুরোপুরি পাঠ করা বাধ্যতামূলক করা হবে৷ সঙ্গে নামাজ পড়া এবং বেশ কিছু হাদিস মুখস্থ করানোরও উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এসব পরিকল্পনা কার্যকর করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু'জন সনদপ্রাপ্ত হাফিজকে নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের৷

ইসলামাবাদভিত্তিক শিক্ষাবিদ আব্দুল হামিদ নায়ার মনে করেন, ইমরান খান সরকারের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো ইসলামিকরণের এ উদ্যোগ সমাজে জাতিগত বিভেদ আরো বাড়াবে এবং এখনো বিদ্যমান জাতিগত বৈচিত্র্য আরো কমাবে৷

ইসলামাবাদের নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট পারভেজ হুদভয় বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগকে ‘অভূতপূর্ব' হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটা আসলে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়কার ইসলামিকরণের প্রয়াসকেও ছাড়িয়ে যাবে৷

লাহোরের মানবাধিকার কর্মী পিটার জ্যাকব বলেন, ইমরান খান সরকার পাঠক্রমে শতকরা অন্তত ৩০ ভাগ ইসলামি ‘কন্টেন্ট' রাখার উদ্যোগ নিয়েছে৷ সরকারের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে অনেকে এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলেও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন তিনি৷

সরকার দলীয় সাংসদ মুহাম্মদ বশির খান অবশ্য মনে করেন, ‘‘আদর্শগতভাবে পাকিস্তান একটি ইসলামি রাষ্ট্র আর তাই এখানে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আমাদের সিলেবাসকে এখনো পুরোপুরি ‘ইসলামি' করা হয়নি৷ আমাদের পাঠক্রমের আরো ইসলামিকরণ প্রয়োজন৷''

বাংলাদেশের  কাছ  থেকে  শিক্ষা  নিতে  হবে'

পাকিস্তান সরকারের এ পদক্ষেপের সমালোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে৷

অর্থনীতিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা অতীতে বেশ কয়েকবারই শোনা গেছে৷ এবার শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়েও বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন কিশোয়ার জেহরা৷ মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) দলের এ সংসদ সদস্য ইমরান খান সরকারের শিক্ষানীতির কঠোর সমালোচনা করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উৎসাহিত করা হয়৷ আমাদের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা৷'' কিশোয়ার জেহরার দল এমকিউএম ইমরান খান সরকারের জোটসঙ্গী৷

এস খান (ইসলামাবাদ)/এসিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য