পুটিনকে খোঁচা দিয়ে নজর কাড়লেন শলৎস
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব ও দুর্বলতার অভিযোগ কিছুটা হলেও ঝেড়ে ফেলতে পারলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ মঙ্গলবার তিনি মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন সংকট সম্পর্কে জার্মানি তথা পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন৷ রাশিয়ার প্রতি কূটনীতি, সংলাপ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও ইউক্রেনের ঐক্য ও অখণ্ডতা নিয়ে কোনো রকম আপস মানতে তিনি যে প্রস্তুত নন, সে বিষয়ে কোনো সংশয় রাখেননি শলৎস৷
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো রাখঢাক না করেই দুই নেতা বাকযুদ্ধে মেতে ওঠেন৷ শলৎস তার প্রজন্মে ইউরোপের মাটিতে যুদ্ধ হয় নি, এমন দাবি করায় পুটিন ১৯৯৯ সালে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার উপর ন্যাটোর হামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন৷ শলৎস বলেন, কসোভোয় আলবেনীয় জনগোষ্ঠীর গণহত্যা এড়াতেই সেই পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল৷ পুটিন ইউক্রেনের পূর্বে ডনবাস অঞ্চলে সংখ্যালঘু রুশ জনগোষ্ঠীর গণহত্যা এড়ানোর দাবি করলেও শলৎস সে ক্ষেত্রে ‘গণহত্যা’ সংজ্ঞাটি মেনে নেন নি৷ অদূর ভবিষ্যতে ন্যাটোর আরও পূর্বমুখী সম্প্রসারণের কোনো সম্ভাবনা নেই, এমনটা দাবি করে শলৎস বলেন, অন্তত তাদের কার্যকালে এমন কোনো অ্যাজেন্ডা রূপায়িত হবে বলে তার মনে হয় না৷
কিছুটা কৌতুকের সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর মন্তব্য করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট কতকাল ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছেন, সেটা তার জানা নেই৷ সময়টা দীর্ঘ হলেও অনন্তকাল হতে পারে না৷ রাশিয়ার এক মানবাধিকার সংগঠনের উপর নিপীড়ন ও বিরোধী নেতার প্রতি ‘অন্যায়’ পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেও শলৎস পুটিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেন৷
শলৎসের মস্কো সফরের ফলে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা কতটা কমলো, সে বিষয়ে দন্দ্ব রয়ে গেছে৷ মঙ্গলবারই রাশিয়া সীমান্ত থেকে কিছু সৈন্য ফিরিয়ে এনেছে৷ তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, যে এখনো প্রায় দেড় লাখ রুশ সৈন্য ইউক্রেনের সীমন্তে মোতায়েন রয়েছে৷ মঙ্গলবার এক সাইবার হামলার জন্যও ইউক্রেন নাম না করেও রাশিয়াকে দায়ী করেছে৷ হ্যাকারদের কারসাজির কারণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুটি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছিল৷ রাশিয়া সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ সাইবার হামলা দিয়ে শুরু করে সে দেশ সামরিক অভিযান চালাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশঙ্কা করছেন৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন টেলিফোনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনায় আবার সে দেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন৷ তিনি ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার তৎপরতা কমানোর ডাক দেন, তবে সেই পদক্ষেপ স্বচ্ছ ও অর্থবহ হতে হবে৷ ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সামরিক অভিযানের আশঙ্কা দূর হচ্ছে বলে মনে করছেন না৷ বিশেষ করে রাশিয়া যেভাবে সৈন্য সরালেও প্রায়ই সামরিক সরঞ্জাম রেখে যায়, তার ফলে দ্রুত সামরিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ থেকে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)