পোল্যান্ডে সমকামী মেয়রকে ঘিরে পরিবর্তনের স্বপ্ন
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮সমর্থকদের সামনে প্রাণবন্ত, রোমাঞ্চকর ও আত্মবিশ্বাসী দেখা যায় বিড্রোনকে৷ পোল্যান্ডে প্রথম আত্মস্বীকৃত সমকামী মেয়র তিনি৷ কয়েক মাস ধরে নিজের নতুন দল নিয়ে কথা বলছেন৷ আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই তাঁর দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে৷
তাঁর নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পড়ছে৷ শত শত, কখনো কখনো হাজার হাজার মানুষ তাতে আগ্রহী হচ্ছে৷ বামপন্থি ধারণা নিয়েই এগোচ্ছেন তিনি–দারিদ্র্য বিমোচন, অ্যাবরশনের বিধিনিষেধ শিথিল করা, নতুন নতুন প্রি-স্কুল তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন৷
ক্যাথলিক দেশে সমকামী
কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য পরিচিত সাউদার্ন পোল্যান্ড থেকে উঠে এসেছেন বিড্রোন৷ সমকামের জন্য তরুণ বয়সে তাঁকে একঘরে করা হয়৷ এজন্য এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল যে পরিত্রাণের জন্য আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন৷ পরে রাজনীতিতে এসে এলজিবিটি অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন৷
২০০১ সালে বিড্রোন গড়ে তোলেন ‘ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট হোমোফোবিয়া'৷ এটা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয় দেশে৷ এর দশ বছর পর প্রথম সমকামী হিসেবে পোল্যান্ডের পার্লামেন্টে যান তিনি৷
দীর্ঘদিনের পার্টনার সিস্তফকে বিয়ে করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিড্রোন৷ তবে পোল্যান্ডে এখনো সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ নয়৷ ৪২ বছর বয়সি বিড্রোন বলেন, ‘‘আমি একজন পোল৷ অনেক বছর ধরে আমি কর দিচ্ছি এবং দেশের সেবা করেছি৷ সে কারণে দেশের অন্য সবার মতো আমার সঙ্গেও ভালো আচরণ করা হবে, সেই প্রত্যাশা করি৷''
২০১৪ সাল থেকে স্লুপস্কের মেয়র বিড্রোন৷ সেখানে সমকামী বিয়ের বৈধতা এবং নিজেদের বিয়ের করার সুযোগ আশা করেন বিড্রোন ও তাঁর পার্টনার৷
পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ৯৩ হাজার মানুষের শহরটিতে বিড্রোনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরে৷ শহরকে ঋণমুক্ত করায় বিড্রোনের প্রশংসা রয়েছে৷ জনমত জরিপ অনুযায়ী, শহরের ৬০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে তাঁর প্রতি৷ তবে বিড্রোন এবার জাতীয় মঞ্চে ফিরতে চান৷
পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন জাতীয়তাবাদী, রক্ষণশীল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (পিআইএস)-এর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছেন বিড্রোন৷ তবে মধ্যপন্থি শিবিরে এখনো জায়গা পেতে লড়ছেন তিনি৷ ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক সিভিক প্ল্যাটফর্ম (পিও) এবং লিবারেল মডার্ন পার্টি গত মে মাসে এক মঞ্চে এসে ‘নাগরিক মোর্চা' গঠন করে৷
বিড্রোন প্রার্থীদের ভোট নষ্ট করতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন তাঁরা৷ অ্যাবরশনের বিধি-নিষেধ শিথিল করার পক্ষে স্পষ্টভাবে বলছেন তিনি৷ পোল্যান্ডে এটি এমন স্পর্শকাতর বিষয় যে, ভোট হারানোর ভয়ে উদারপন্থিরা এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না৷
গত বেশ কয়েক বছর ধরে বামপন্থিদের অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি৷ তাদের চাইল্ড সাপোর্ট প্রোগ্রাম পোল্যান্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্য কোনো সোশ্যাল প্রোগ্রামের মতো নয়৷
এর ফলে জনবান্ধব কর্মসূচির পক্ষে তবে পিআইএসের মতো জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল মনোভাবের নয়, এমন ভোটারদের টানতে পারেন বিড্রোন৷
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাঁকে তুলনা করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে৷ বির কারিশমা পোল্যান্ডের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যা প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর জন্য হয়ত চিন্তার কথা৷
মনিকা সিয়েরাদস্কা/এএইচ