1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতি বুথে আধাসেনা ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ জুলাই ২০২৩

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৮২২ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে৷ কিন্তু প্রতি বুথে আধাসেনা থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সন্ত্রাসের আশঙ্কায় বিরোধীরা৷

https://p.dw.com/p/4TOJF
সরকারি কর্মীদের যৌথ মঞ্চ প্রতি বুথে আধাসেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছে৷ছবি: Payel Samanta

পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণার পর বাহিনী নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের লড়াই তুঙ্গে উঠেছে৷ উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ের পর বাহিনীর ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে৷ মোট ৮২২ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর ব্যাপারে সোমবারই পাকা কথা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ কিন্তু কমিশনের নির্দেশিকায় বোঝা যাচ্ছে না, প্রতি বুথে আধাসেনা থাকবে কি না৷

কমিশন জানিয়েছে, প্রতি বুথে সশস্ত্র বাহিনী থাকবে৷ রাজ্যে ৪৪ হাজার ৩৮২টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৬১ হাজার ৬৩৬ বুথ রয়েছে৷ এর মধ্যে ৪ হাজার ৮৩৪ অর্থাৎ আট শতাংশের কম বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন৷ এই বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে ধরে নেয়া যায়৷ বাকি ৯২ শতাংশ বুথে কি সশস্ত্র পুলিশ থাকবে, আধাসেনা নয়?

কমিশনের আয়োজন

আগামী শনিবার ৮ জুলাই ভোটগ্রহণ৷ কমিশনের বিচারে কোচবিহারে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১৩ শতাংশের উপরে৷ ক্যানিং, ভাঙড়, বাসন্তী কুলতলি অশান্ত হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় স্পর্শকাতর বুথ ৯ শতাংশের কম৷ মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশের নীচে৷

কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিন সব বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে থাকবে ১৪৪ ধারা৷ সূত্রের খবর, স্পর্শকাতর বুথে থাকবে বাড়তি বাহিনী৷ রাজ্য ৭০ হাজার পুলিশ দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷ কিন্তু পুলিশ এই রাজ্যের না অন্য রাজ্যের, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে৷

স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করলেই কমিশনের দায়িত্ব ফুরিয়ে যায় না: দেবাশিস দাশগুপ্ত

প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করলেই কমিশনের দায়িত্ব ফুরিয়ে যায় না৷ বাহিনী অন্যত্র পাহারায় থাকলে বুথে অবাধ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে না৷ প্রতি বুথে আধাসেনা দেয়ার দাবি এ কারণেই তুলেছে বিরোধীরা৷’’

ভোটকর্মীদের উদ্বেগ

বিরোধীদের পাশাপাশি সরকারি কর্মীদের যৌথ মঞ্চ প্রতি বুথে আধাসেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছে৷ এরাই ভোটকর্মী হিসেবে নিযুক্ত থাকবেন গ্রামে গ্রামে৷ রাজ্য নির্বাচন কমিশনে দরবার করেছে মঞ্চ৷ কর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন তাই নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তায়৷

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটের আগের রাতে এসে আমাদের শাসানো হয়, ২০০টা ব্যালট দিন৷ ভোটের দিন বোমাবাজি করে ছাপ্পা ব্যালট ভরে দেয়া হয় বাক্সে৷ এ কাজে সাহায্য না করলে হুমকির মুখে পড়েন ভোটকর্মীরা৷’’

মঞ্চের বক্তব্য, প্রাণ বাঁচাতে আপস করেন ভোটকর্মীরা৷ নইলে আক্রমণের মুখে পড়েন৷ অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, এই মন্তব্য লিখতে বাধ্য করা হয়৷ এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে প্রতি বুথে বাহিনী চাইছে যৌথ মঞ্চ৷

ধাক্কা আইএসএফের

ভাঙরের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী আবেদন করেছিলেন বাহিনী পর্যাপ্ত না থাকায় ভোট একাধিক পর্যায়ে নেওয়া হোক৷ যদিও পরবর্তীতে ৮২২ কোম্পানি আধাসেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷ সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট নওশাদের আবেদন খারিজ করে দেয়৷ একই দাবিতে মামলা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷

দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপদ্রুত ভাঙড় এলাকায় আইএসএফের ৮২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন ফের দাখিলের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে৷ বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চ এই প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশনকে৷ এর বিরুদ্ধে মামলা হয় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে৷ সোমবার বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ফের মনোনয়নের নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে৷

অত্যাধিক মামলায় রুষ্ট

এবারের পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে অভূতপূর্ব আইনি লড়াই চলছে৷ নির্বাচনের চারদিন আগেও মামলা দায়ের হচ্ছে কলকাতা হাই কোর্টে৷ এ নিয়ে সোমবার উষ্মা প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম৷ একই বিষয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে ভোটের মুখে৷ নির্বাচন বাতিলের আর্জিও জমা পড়েছে আদালতে৷ এমনকী ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের আবেদন রয়েছে মামলায়৷

এ সবের জেরে প্রধান বিচারপতি যে রুষ্ট, তা তিনি গোপন করেননি৷ আইনজীবীদের উদ্দেশে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে৷ প্রত্যেকে হেডলাইনে আসতে চান৷’’ 

এতে অন্য মামলার শুনানি করতে পারছে না আদালত৷ প্রধান বিচারপতির মুখেই শোনা যায় আবেদন, ‘‘দয়া করে এ জন্য আদালতকে ব্যবহার করবেন না৷ দয়া করে আমাদের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করবেন না৷’’

দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এ বার অধিকাংশ মামলায় নির্দেশ গিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে৷ শেষদিকে তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে৷ কিন্তু আদালত নয়, কমিশন নয়, শেষ বিচার জনতার হাতেই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য