প্রতিশ্রুতিতেই আটকে জামায়াতের বিচার
১৭ জুলাই ২০১৭এরই মধ্যে ছয় যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে৷ রায় কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাসেম আলী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা৷
ফাঁসি কার্যকর হওয়া অপর যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা৷
এই মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে বাংলাদেশজুড়ে৷ কিন্তু সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামের বিচার৷ একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস সরকারের নানা তরফ থেকেও এসেছে বারবার৷
তিন বছর আগেই জামায়াতের বিচারের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে রেখেছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন৷ তাহলে তিন বছরেও এই মামলার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না কেন?
জামায়াতে ইসলামীর বিচার মামলায় প্রসিকিউশনের নেতৃত্বে আছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, বল এখন সরকারের কোর্টে৷ ‘‘তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষ করে ২০১৪ সালের ২৭শে মার্চ প্রসিকিউটর অফিসে জমা দেয়৷ তারপর আমাদের কাজ যখন শেষের দিকে তখন, ১৯শে মে, ২০১৪, আইনমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন বিচারের যে বিষয়টি আছে তার আইনি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে৷''
এই মামলায় সংশোধিত আইনেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের কথা ভাবছে প্রসিকিউশন৷ ‘‘এখনও পর্যন্ত পার্লামেন্ট থেকে কোনো আইন না পাওয়ায় আমাদের তরফ থেকে কাজ আর এগোয়নি'', জানালেন তুরিন আফরোজ৷
বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠনের বিচারের সুযোগ থাকলেও তার শাস্তির কোনো স্পষ্ট বিধান নেই৷ ফলে সংগঠনকে নিষিদ্ধ এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান যুক্ত করে সংশোধনী আনার কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷
কিন্তু আদৌ সেই সংশোধনীর প্রয়োজন আছে কিনা, সে নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সাথে দ্বন্দ্বেও জড়িয়েছেন বর্তমান আইনমন্ত্রী৷ কিন্তু কী হলো সেই সংশোধনীর?
তুরিন আফরোজ বলছেন, ‘‘আমাদের সাথে কয়েক দফা কথা হয়েছে৷ যতবারই কথা হয়েছে বলা হয়েছে, আইন খুব তাড়াতাড়ি সংশোধিত হয়ে আসছে৷ এখন খুব তাড়াতাড়িটা আসলে কত দূর, সেটা পার্লামেন্টই বলতে পারবে৷''
গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী সংশোধিত আইন ‘দ্রুতই মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হবে' বললেও এখন এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব আইন মন্ত্রণালয়৷
সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ ও সবুজ সংকেত না পাওয়ায় মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধন করতে ধীরগতিতে চলছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷
একই ধরনের অভিযোগ তুলছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্দোলন করে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও৷ ‘বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা' হাসিলের উদ্দেশ্যেই এই ধীরগতি কিনা, প্রশ্ন তুলছেন তিনি৷ ‘‘অন্তত ৫-৬ বার তারিখ পেছানোর কথা আমরা জেনেছি, যখন আমাদের কর্মসূচি ছিল৷ কিন্তু এরপর থেকে সে কথাটিও ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ আদতে তারিখ পেছানোর যে কথাটি, সেটিও তারা এখন আর বলছে না৷''
নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতের সাথে সরকারের বিশেষ কোন ‘চুক্তি' হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলছেন ইমরান এইচ সরকার৷ ‘‘সরকার নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াতকে কব্জাবন্দি করার জন্য নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াটি বন্ধ রেখেছে৷ আমরা দেখছি দু'টো কিন্তু একসাথে চলছে৷ একদিকে জামায়াতেরও কোনো তৎপরতা নেই, আরেক দিকে সরকারও জামায়াত নিষিদ্ধে কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না৷''
আইন সংশোধনের সবশেষ তথ্য পেতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ তবে কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷ ‘দেরি হচ্ছে' মানলেও কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনিও৷ এতে জনগণের প্রত্যাশায় কিছুটা চিড় ধরছে, সেটাও মানছেন তিনি৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই৷ সেজন্য আইন তৈরির জন্য বলা হয়েছে৷ সে কাজে বিলম্ব হচ্ছে, সেটা ঠিক, তবে এটা হতে বাধ্য৷''
জামায়াতে ইসলামীর বিচার কেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷