নিলামে প্রথম অ্যাপল কম্পিউটার
২৪ জুন ২০১৩১৯৭৬ সালে তৈরি এই অ্যাপল ওয়ান কম্পিউটার ছিল আজকের ম্যাকবুক, আইপ্যাড, আইফোনদের পূর্বসূরি৷ এই ধরনের কম্পিউটার মাত্র দু'শোটা তৈরি হয়েছিল৷ সে আমলে দাম রাখা হয়েছিল ছ'শো ছেষট্টি ডলার ছেষট্টি সেন্ট৷ এক টুকরো সবুজ প্লাস্টিকের উপর তামার রঙের মেমরি চিপগুলোর একটা জগাখিচুড়ি৷ কম্পিউটারও নয়, নানা তার বেরিয়ে থাকা একটা মাদারবোর্ড৷
আদত অ্যাপল ওয়ানগুলোর অধিকাংশ কবেই ইলেক্ট্রনিক জাঙ্ক হয়ে গিয়েছে৷ শোনা যায়, এখনও নাকি ৩০ থেকে ৫০টা অ্যাপল ওয়ান এখানে সেখানে ‘বেঁচে' রয়েছে৷ তাদেরই একটি এবার নিলাম করতে চলেছে ক্রিস্টিজ নিলাম সংস্থা৷ এই কম্পিউটারটি ছিল টেড পেরির কাছে, যিনি পেশায় ছিলেন একটি স্কুলের স্টাফ সাইকোলজিস্ট৷ এখন অবসর নিয়েছেন৷ ক্যালিফর্নিয়ার সাক্রামেন্টোর কাছে তাঁর বাড়িতে একটি পিচবোর্ডের বাক্সে এই সোনার ‘অ্যাপল'-টি রাখা ছিল৷
আট কিলোবাইট মেমরি!
অ্যাপল ওয়ানের ছিল আট কিলোবাইট মেমরি, যে তুলনায় আজকের একটা সাধারণ কম্পিউটারের মেমরি প্রায় দশ লাখ গুণ বেশি৷ কিন্তু অ্যাপল ওয়ান তো আর কম্পিউটার নয়, অ্যাপল ওয়ান হলো ইতিহাস৷ ২০১১ সালের অক্টোবরে স্টিভ জবস মারা যাবার পর ভিন্টেজ অ্যাপল প্রোডাক্টগুলির দাম বেড়েই চলেছে৷ গত বছর সথবিজ নিলাম সংস্থা একটি অ্যাপল ওয়ান বেচে প্রায় চার লাখ ডলারে৷ গত নভেম্বরে আরেকটি অ্যাপল ওয়ান নিলাম হয় ছ'লাখ চল্লিশ হাজার ডলারে৷ গতমাসে আরেকটি অ্যাপল ওয়ান সে রেকর্ড ভাঙে ছ'লাখ একাত্তর হাজার ডলার দর তুলে৷
সোমবার ২৪শে জুন থেকে শুরু করে ৯ই জুলাই পর্যন্ত অনলাইন নিলাম চলবে৷ অ্যাপল ওয়ানটিকে দেখা যাবে স্যান ফ্রান্সিস্কোর কাছে মাউন্টেন ভিউ-এর কম্পিউটার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে৷ অদৃশ্য থেকে যাবে তার অমূল্য ইতিহাস, যদিও অশ্রুত নয়, কেননা আজ ৭০ বছর বয়সের পেরি নিজেই শুনিয়েছেন সে ইতিহাস৷ ১৯৭৯ অথবা ১৯৮০ সালে তিনি একটি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেখার পর অ্যাপলওয়ানটি কেনেন – মালিককে তাঁর নিজস্ব কিছু কম্পিউটার সরঞ্জাম দিয়ে বদলাবদলি করে নেন৷ নগদ মূল্য কিছুই দিতে হয়নি৷
মানবিক মূল্য
অ্যাপল ওয়ানটির মানবিক ও শিক্ষাগত মূল্য বোঝা যাবে পেরির বাকি কাহিনি থেকে৷ সে সময় তিনি মনস্তত্ববিদ হিসেবে একটি স্কুলে কাজ করছিলেন৷ প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি খেয়াল করেন, কিভাবে একটি টেলিটাইপ মেশিন একটি বধির ছেলেকে পড়তে-শিখতে সাহায্য করে৷
প্রথম কম্পিউটারগুলি বাজারে আসার পর পেরি সেগুলিকে প্রোগ্রাম করতে শেখেন৷ তারপর তিনি খোদ স্টিভ ওয়জনিয়াকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ ওয়জনিয়াক পেরিকে অ্যাপল-এর ‘ইন্টারনাল কোড' দিতে রাজি হন, যা-তে পেরি এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ' পাঠের পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারেন৷
পেরির অ্যাপল ওয়ানের মাদারবোর্ডটাই শুধু আদত৷ কিবোর্ড, মনিটর, ক্যাসেট টেপ ডেক ইত্যাদি পরে যোগ করা হয়েছে৷ তবে কম্পিউটারটি আজও কাজ করে, এবং তা সেই আদত চিপগুলো দিয়েই৷ আরো আদত হলো কম্পিউটারটির, মানব প্রগতির, মানব প্রযুক্তির, মানবিকতার অগ্রযাত্রার ইতিহাস, কোনো নিলামেই যার সঠিক মূল্য কোনোদিন নির্ধারিত হবে না৷
এসি/ডিজি (এপি)