একাত্তরের জননী রমা চৌধুরী
১ নভেম্বর ২০১৬রমা চৌধুরী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সব হারিয়েছেন৷ পাকিস্তানি হায়েনারা একাত্তরে তাঁর সন্তান, ভিটেমাটি, সম্ভ্রম সব কেড়ে নিয়েছে৷ আর তখন তিনি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ চট্টগ্রামের প্রথম নারী এমএ রমা চৌধুরী ১৯৬২ সাল থেকে ১৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন৷ আর গত ২০ বছর ধরে লেখালেখি করে কাটিয়েছেন৷
কিন্তু একাত্তরে সব হারানো এই নারী যেন পথকেই তার ঠিকানা করে নিয়েছেন৷ চট্টগ্রামের রাস্তায় বই ফেরি করে তার জীবন চলে৷ মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘‘একাত্তরের জননী৷''
রমা চৌধুরীর এই দুঃসহ জীবন এবং সংগ্রামের কথা সংবাদ মাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়৷ আর তা নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার৷ আর তিনি দায়িত্ব দেন তাঁর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিলকে৷ তাদের দু'জনের যোগাযোগ হয়৷ রমা চৌধুরী শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন৷ তিনি দেখা করতে আসেন খালি পায়ে৷ ২ সন্তানকে হারানোর পর থেকে রমা চৌধুরী আর পায়ে জুতা বা স্যান্ডেল পড়েন না৷ চলাফেরা করেন নগ্ন পায়ে, জানান মাহবুবুল হক শাকিল৷
শাকিল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরীর সঙ্গে একান্তে আধাঘণ্টা কথা বলেন৷ তারা একান্তে কথা বলার সময় তাদের জীবনের সংগ্রাম আর কষ্টের কথা বলেছেন৷ এসময় রমা তাঁর লেখা বই ‘‘একাত্তরের জননী’’ প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন৷ প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরীর আত্মসম্মান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোন সহায়তা চাননি৷''
তবে রমা নিজে অনাথ আশ্রম গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছেন, জানান শাকিল৷ আর সেই স্বপ্ন তিনি পুরণ করতে চান ফেরি করে বই বিক্রির টাকায়৷ প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলেন সব হারানোর কষ্ট তিনি বোঝেন৷
রমা চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তাঁর নিজের কোন চাওয়া পাওয়া নেই৷ সবাই মিলে যদি দেশটাকে গড়া যায় তাহলে তিনি খুশী হবেন৷ বিলাসিতা-উপভোগ বাদ দিয়ে সবাই মিলে দেশটাকে গড়ার কথা বলেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর রমা চৌধুরী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান৷ সেখান থেকেই তিনি চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা হন৷ এখন পর্যন্ত রমার ১২টি বই প্রকাশ পেয়েছে৷ আর এই বই তিনি ফেরি করে বিক্রি করেন৷ নগ্ন পায়ে হেঁটে৷