1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবাসে শ্রমিকদের মৃত্যুর হার বাড়ছে, তদন্তের দাবি

২৬ জানুয়ারি ২০১৯

২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত  ৩ হাজার ৭৯৩ জন নারী শ্রমিক প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেছেন৷ সম্প্রতি সরকার থেকে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/3CARE
ছবি: DW/H. R. Swapan

২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে জর্ডান গিয়েছিলেন মৌসুমি আক্তার৷ সম্প্রতি তাঁর মৃতদেহ ফিরেছে বাংলাদেশে৷ ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল স্ট্রোক করে মারা গেছেন মৌসুমি৷ পরিবার বলছে, নির্যাতিত হয়ে মারা গেছেন তিনি৷

মৌসুমির চাচা মোহাম্মদ ইমরান খান বলেন, মৌসুমির মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে৷ ২০ বছরের মেয়েটির কোনো রোগ ছিল না বলেও দাবি তাঁর৷ তাই মৌসুমি স্ট্রোক করে কেন মারা যাবেন, এ প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷

তিনি সরকারের কাছে তাঁর ভাতিজির আরেকটি ময়না তদন্ত করানোর দাবিও জানিয়েছেন৷  দেশে শ্রমিকদের মৃতদেহ ফিরলেই প্রত্যেকেরই দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তের জোর দাবি জানান তিনি৷

মৌসুমির মা জানান, তিনি মেয়ের সঙ্গে সপ্তাহে একবার কথা বলতেন৷ ভীষণ মন খারাপ থাকতো তাঁর মেয়ের৷ কোনো বিশ্রাম ছাড়া অবিরাম পরিশ্রম করতে হতো তাঁকে৷ মা আরো জানান, শেষ যখন কথা হয় তখন বাড়ি আসতে চেয়েছিলেন মৌসুমি, নতুন কাজ খুঁজছিলেন৷ তিনি মনে করেন, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে৷ 

সৌদি প্রবাসী মৃত বেলাল হোসেনের আত্মীয়রাও বেলালের মৃত্যু সম্পর্কে একই কথা বলেছেন৷ ২৩ বছর বয়সি বেলাল হোসেনের ডেথ সার্টিফিকেটেও স্ট্রোকের কথা লেখা রয়েছে৷ তবে বেলালের রুমমেট জানান, স্ট্রোকে নয়, পথে পড়ে থাকা পানি পরিষ্কার করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান বেলাল৷

ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি স্ট্রোকে মারা গেছেন৷

সরকারি তথ্য বলছে, বাংলাদেশিদের শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়া বেড়েছে৷ ২০১৭ সালে ১০ লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশে কাজ নিয়ে গেছে, যা এ যাবতকালে সবচেয়ে বেশি৷ এটিকে আশাব্যাঞ্জক বলেই ধরছে বাংলাদেশ সরকার৷ তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশে শ্রমিকরা যে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান হার তারই প্রমাণ দিচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সিআর আবরার প্রবাসে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, ‘‘অতিরিক্ত কাজের চাপ ও মানসিক চাপ একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷ তাঁদের প্রচুর খরচ করে বিদেশে যেতে হচ্ছে৷ এবং প্রবাসী শ্রমিকরা জানেন না তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন এবং কী পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন৷ আর আমরাও স্ট্রেস বা চাপের বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছি৷''

ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টার জানিয়েছে, সম্প্রতি একদিনেই দেশে ফিরেছে ১০০ সৌদি প্রবাসী শ্রমিক৷ তাঁদের অধিকাংশই নারী এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত৷ ব্র্যাক নিজেদের উদ্যোগে গুরুতর অসুস্থদের হাসাপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে৷

অভিবাসী কর্মী উন্নয়নের প্রধান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘অনেক টাকা ব্যয় করে বিদেশ যাওয়া শ্রমিকরা সেখানে খুবই নাজুক পরিস্থিতির শিকার হন৷ অনেকে মানবেতর জীবন কাটান প্রবাসে৷ এসব কারণেই মৃ্ত্যুর হার বাড়ছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রবাসীরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের জোগান দেন৷ তাঁদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও  প্রয়োজন৷''

প্রবাসী শ্রম ও কল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তা রওনাক জাহান বলেন, ‘‘আমাদের এসব মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অবশ্যই ভাবা উচিত৷ মৃতের পরিবার যদি মনে করে দ্বিতীয়দফা ময়না তদন্তের প্রয়োজন, সে বিষয়েও সহায়তা করতে প্রস্তুত আমরা৷''

এফএ/এসিবি (রয়টার্স)