নিজেই মাথা কামালেন সোনু নিগম
২০ এপ্রিল ২০১৭বলিউডের প্রথম সারির গায়ক সোনু নিগম৷ রোজ সকালে লাউডস্পিকারে আজানের শব্দে তাঁর নাকি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে৷ গত সোমবার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, ‘‘আমি মুসলমান নই৷ তারপরও রোজ সকালে আজানের শব্দে আমার ঘুম ভাঙবে কেন? ভারতে এভাবে ধর্মের অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়া কবে বন্ধ হবে?''
তবে শুধু মসজিদ নয়, ‘‘মন্দির বা গুরুদ্বারেও লাউডস্পিকার ব্যবহার হল তা শব্দদূষণ ছাড়া আর কী? যেসব ধর্মস্থল শব্দদূষণের জন্য দায়ী, মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়, শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না, সেইসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা নেই৷'' সোনু নিগমের কথায়, লাউডস্পিকার ব্যবহার ধর্মাচরণের মধ্যে পড়ে না৷ তাই প্রার্থনাকালে কিংবা ধর্মপ্রচারে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ হওয়া উচিত৷ এটা জবরদস্তি ছাড়া আর কী? সোনুর মতে, ‘‘হজরত মহম্মদের সময়ে না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল লাউডস্পিকার৷ কাজেই ইসলামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটা অযথা৷''
আর যায় কোথায়? ধর্মীয় ভাবাবেগ বলে কথা৷ শুরু হয় তর্ক-বিতর্কের তুফান৷ পশ্চিমবঙ্গের এক মৌলবি জারি করেন ফতোয়া৷ সোনু নিগমের মাথা ন্যাড়া করে যে তাঁকে জুতোর মালা পরাতে পারবে, তাঁকে দেওয়া হবে দশ লাখ টাকা বকশিস৷ কিন্তু গায়ক সোনু সে সুযোগ কাউকে দেননি৷ বরং নিজেই নাপিত ডেকে নিজের বাড়িতে মাথা কামিয়ে মৌলবিকে বার্তা দিয়েছেন, ‘‘মাথা ন্যাড়া করেছি এবার টাকাটা তৈরি রাখুন৷''
নিজের বাসভবনে মিডিয়ার কাছে ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার বাজানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান খোলসা করে তিনি জানান যে, তিনি আদৌ মুসলিমবিরোধী নন৷ তাঁর টুইটার-বার্তার ভুল ব্যাখা করে অযথা হৈচৈ করা হচ্ছে৷ তিনি ধর্মনিরপেক্ষ৷ তাঁর সংগীত গুরু মহম্মদ রফি সাহেব৷ তাঁর নিজের গাড়ির ড্রাইভারও মুসলমান৷ তাঁর আপত্তি আজান বা আরতিতে নয়, আপত্তি লাউডস্পিকারে৷
এই বিতর্কের মোড় উল্টোদিকে ঘুরিয়েছেন আরেক জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া৷ জেনে হোক বা না জেনে আজান বিতর্কে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন তিনি৷ আজান নিয়ে তাঁর ভিডিওটি নেহাতই কাকতালীয়৷ তাই বলে কি বিতর্ক থামে? থামে না৷ কী বলেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া? গত বছর ভোপালে শ্যুটিং করতে গিয়ে তিনি নাকি বলেছিলেন, সারা দিনের খাটাখাটুনির পর সন্ধ্যার দিকে বারান্দায় বসে আজানের শব্দ শুনলে মনটা শান্ত হয়ে যায়, চলে যায় মানসিক চাপ ও ক্লান্তি৷ প্রিয়াঙ্কার এই উল্টো সুরের মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে বিতর্কের আরেক পর্ব৷
স্বাভাবিকভাবেই আজানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ে সকলে একমত নন৷ বলিউডের শিল্পী মহলেও এক্ষেত্রে পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত৷ একটা অংশ মনে করেন, সোনু নিগমের মতামত সংবেদনশীল নয়৷ যেহেতু এটা ভাবাবেগের প্রশ্ন, তাই আর একটু সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল সোনু নিগমের৷ বলিউডের আরেক নাম করা গাইয়ে শান মনে করেন, অন্যকে বিরক্ত না করে, অন্যের অসুবিধা না করে সবাই যে যার ধর্ম পালন করতে পারেন, সন্দেহ নেই৷ কিন্তু বিরক্তি সৃষ্টি করে নয়৷ কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের মতে, আজান জরুরি, লাউডস্পিকার নয়৷ একই সুর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মুখে৷ তারা বলেন, ধর্মস্থানের চারপাশে ১০০ মিটার চৌহদ্দির মধ্যে মাইক বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে আদালতের৷ অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ মসজিদ-মন্দির কর্তৃপক্ষ৷
পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মাদ্রাসা এবং মসজিদের কর্তাব্যক্তি নজরুল হাফেজ হাজি সাহেব আজানে লাউডস্পিকার বাজানোর প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজানের সময় শব্দসীমা আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখা হয়৷ আইনের মধ্যে থাকলে আপত্তি কেন হবে? এটা তো ভারতের নাগরিক হিসেবে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার৷'' আদালতের বেঁধে দেওয়া এই শব্দসীমা কতটা? উত্তরে হাজি সাহেব ডয়চে ভেলেকে জানান, সেটা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আসলে আগে মুখে আজান দেওয়া হতো আর পাঁচজনকে আহ্বান করার জন্য৷ হজরত মহম্মদের সময় লাউডস্পিকার ছিল না, কিন্তু তখনও আজান ছিল৷ দেখুন, যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনের সঙ্গে অনেক কিছুই পালটে যায়, পালটাতে হয়৷ অনেক সময় জোরে জোরে গান বাজানো হয়৷ আশেপাশের অনেকের বিরক্তির কারণ হয় সেটা, কিন্তু তারপরও মেনে নিতে হয় বইকি৷
মুম্বইয়ের হাজি আলি দরগার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মুফতি মনসু জিয়াই বলেন, আজানের সময় শব্দসীমা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকে৷ এরপর সোনু নিগমের দিকে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, ‘‘আজানে যে পরিমাণ আওয়াজ হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি শব্দদূষণ হয় ট্র্যাফিক, রেল ও বিমানে৷ শব্দদূষণ নিয়ে যদি এতই কাতর তিনি, তাহলে ট্র্যাফিক, রেল ও বিমানের আওয়াজ নিয়ে আন্দোলন করছেন না কেন?''
ওদিকে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও বলা হয়েছে যে, আরতির সময়ও নাকি শব্দসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আওয়াজ মন্দিরের বাইরে না যায়৷
বন্ধু, আপনি লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার পক্ষে না বিপক্ষে? লিখুন নীচের ঘরে৷