ফিনল্যান্ডে পরিবেশবান্ধব বাড়ি
৩ এপ্রিল ২০১৫ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির উপকণ্ঠে মার্কো কাসাগ্রান্ডে-র বাড়ি৷ ২০১৩ সাল থেকে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান সহ এখানে বসবাস করছেন৷ গোল জানালাওয়ালা বাড়িটি দেখলে জাহাজের কথা মনে হয়৷ বাড়ির নক্সা নিয়ে কাজ করার সময় এই আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে৷ পাথুরে জমি ও তার উপর যে সব গাছপালা ছিল, সেগুলি অক্ষত রেখে মার্কো বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ ‘আপেলে' বাড়ির মালিক মার্কো কাসাগ্রান্ডে বলেন, ‘‘তাই পাইন গাছ ও পাথরের মধ্যে বাড়িটিকে কোনোভাবে ‘ফিট' করতে হয়েছিলো৷ তখন মনে হয়েছিল, আমি যেন বাড়িটিকে কোনো স্বাভাবিক বন্দরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ সেই ভাবনা থেকে ধাপে ধাপে নৌকোর ভাবনা এলো৷ আসলে এটা একটা জাহাজ যেটি এখানে এসে তার স্বাভাবিক বাসা খুঁজে পেয়েছে৷''
অনেক ছোট ঘরের বদলে একটি বড় ঘর৷ মাঝখানে বাথরুম৷ ফিনল্যান্ডের নিজস্ব ‘টুপা' ঐতিহ্যের মধ্যেই এই স্থপতি তাঁর আদর্শ খুঁজে পেয়েছেন৷ বড় তাঁবুর মধ্যে সবার জন্য জায়গা৷ মার্কো বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি ঘরের নির্দিষ্ট ব্যবহারের বদলে গোটা জায়গাটাই খুলে দিলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়৷ একেবারেই ‘বোরিং' হয় না৷ একটা বড় ঘর দিন বা বছরের বিভিন্ন সময় অনুযায়ী বদলে যায়৷ সেটা মনে হয় অনেক কার্যকর হয়৷''
এমনকি শোবার ঘরেও দরজা নেই৷ তাই বিভিন্ন অংশে বিভক্ত একটি বড় ঘরের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার হতে পারে৷ এর একটা বড় সুবিধা রয়েছে৷প্রায় ১৪০ বর্গ মিটার আয়তনের কোনো অংশই বেশি দিন অব্যবহৃত থাকে না৷ ঘরটি এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে, যে পরিবারের সদস্যরা যে যার একান্ত জায়গা খুঁজে পায়৷ ঘর বন্ধ করে নিজস্ব ‘প্রাইভেসি' খোঁজার তাগিদ অনুভব করেন না মার্কো৷ তিনি বলেন, ‘‘আলাদা সময় তো আমি অফিসেই পাই৷ বাচ্চারা স্কুলে যায়৷ নিকিতা-র তো নিজের বাড়ি আছে৷ দিনটা কেমনভাবে সাজানো, সেটাই আসল কথা৷ কিছু সময় আমরা একসঙ্গে কাটাই, তবে বেশিরভাগটাই আলাদা৷ তা সত্ত্বেও আমরা একটি পরিবার৷ কিন্তু নির্ধারিত কোনো অবস্থা নেই, সবই বদলে যাচ্ছে৷''
শীতকালে ফায়ারপ্লেস সুন্দর উত্তাপ দেয়৷ তবে তার উৎস জিও-থার্মাল৷ গোটা বাড়িটাই কাঠের তৈরি, কোনো প্লাস্টিক নেই৷ কাঠের ফাইবার দিয়ে থার্মাল ইনসুলেশন করা হয়েছে৷ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা মার্কো-র কাছে কোনো ফ্যাশন নয়, সেটাই স্বাভাবিক স্পৃহা৷ মার্কো বলেন, ‘‘আমি ল্যাপল্যান্ডে বড় হয়েছি৷ বার বার আমাকে বাড়ি থেকে জঙ্গলে পাঠানো হতো৷ আমি বাড়ির তুলনায় জঙ্গলেই বেশি সময় কাটিয়েছি৷ বাড়িতে আসতাম শুধু খেতে আর ঘুমাতে৷ তারপর আমাকে স্কুলেও যেতে হতো৷ তবে জঙ্গলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম৷ আমি প্রকৃতি খুব ভালোবাসি৷''
ফিনল্যান্ডে ‘আপেলে হাউস'-এর মাধ্যমে মার্কো কাসাগ্রান্ডে প্রকৃতির যতটা সম্ভব কাছে আসতে পেরেছেন৷