ফুটবল দাঙ্গা
১৭ জুলাই ২০১২ফুটবল খেলা যতোই জমাটি হোক না কেন, হঠাৎ মাঠে জ্বলন্ত মশাল এসে পড়লে কিংবা গ্যালারিতে জ্বালানো বোমা থেকে কালো ধোঁয়া এসে মাঠ ঢেকে ফেললে খেলোয়াড়, রেফারি, লাইনসম্যান, দর্শক, পুলিশকর্মী, সকলেরই হৃৎকম্প হয়৷ উত্তেজনা আরো বাড়ে যখন দাঙ্গাকারীরা বেড়া টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে৷ ফুটবলে দাঙ্গার ঘটনা আশি কি নব্বই'এর দশকেও ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে তা একটা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন কোলোন শহরে পুলিশি অভিযানের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার ফল্কার লাঙে:
‘‘হ্যাঁ, এই নতুন পরিস্থিতি গুণগতভাবে আলাদা, কেননা এর পিছনে রীতিমতো একটা পরিকল্পনা থাকে৷ জেনেশুনেই দাঙ্গা শুরু করা হয়৷ আগে যেটা হয়তো ঝোঁকের মাথায় হতো৷ আজ যেন দাঙ্গাবাজরা ভালোভাবে প্ল্যান করেই মাঠে আসে এবং মাঠে নামে৷ তারা একটা কার্যকরী দাঙ্গার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে৷''
যেমন কোলোনে খেলতে আসছিল বোরুসিয়া মোয়েনশেনগ্লাডবাখ, বুন্ডেসলিগার খেলা৷ বোরুসিয়ার ফ্যানদের একটি বাসকে থামতে বাধ্য করে সেটির দিকে পাথর ছোঁড়া হয়৷ পাথরগুলো কিন্তু কোলোনের ফুটবল ক্লাবের পতাকার রঙে রাঙানো ছিল৷ ঘটনায় সারা জার্মানি চমকে যায়৷ রাইনার মেন্ডেল বহুবছর ধরে কোলোন ফুটবল ক্লাবের ফ্যানদের দেখাশোনা করার দায়িত্বে৷ তিনিও এ'ধরণের ঘটনা কোনোদিন দেখেননি:
‘‘আগে এ'সব ছিল না৷ থাকলেও, দু'পক্ষই তা চেয়েছিল বলেই৷ তখনও কিছু কিছু নিয়মকানুন ছিল৷ হাতাহাতি হতো, পাথর ছোঁড়া নয়৷ কেউ মাটিতে পড়ে গেলেই ক্ষান্ত দেওয়া হতো৷ আজকাল এ'টা একটা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ আতসবাজি পোড়ানো, পাথর কি বোতল ছোঁড়া৷''
দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলিতে ফুটবল স্টেডিয়ামে এ'ধরণের পরিবেশ অজ্ঞাত নয়, এমনকি কিছুটা স্বাগতও বটে৷ জার্মান ফ্যানরা যেন তাদের কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করছে৷ ওদিকে ‘ফুটবল হুলিগ্যান' কথাটার জন্ম যে দেশে, সেই ফুটবলের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে কিন্তু এ'সব গোলযোগ নেই৷ রাইনার মেন্ডেল বলেন:
‘‘ইংল্যান্ডের স্টেডিয়ামগুলো একেবারে শান্ত৷ ওখানে আইনই আলাদা৷ পরিষ্কার নিয়ম৷ ধরা পড়লে কী হবে, সেটা সকলেই জানে৷ কাজেই ও'সব জিনিস ওখানে ঘটে না৷''
হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের জ্বলন্ত মশাল থেকে কী হতে পারে, সেটা ডাক্তাররা জানেন কিন্তু ফ্যানরা দৃশ্যত নয়, তা সে গ্রিস, ইটালি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, যেখানেই হোক৷ সব মিলিয়ে জার্মানিতে ফুটবলে দাঙ্গার পরিমাণটা কমের দিকে বলেই পুলিশ এবং ফ্যান সমিতিদের ধারণা৷ কোলোন পুলিশের ফল্কার লাঙে বলেন:
‘‘আসলে আমাদের ফুটবল মাঠে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই৷ সমস্যা শুধু কয়েকজনকে নিয়ে, যারা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷ তাদের আচরণের পরিবর্তন দরকার৷''
প্রতিবেদন: অলিভিয়া ফ্রিৎস / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন