1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেসবুক কি সত্যিই বন্ধ?

আরাফাতুল ইসলাম২০ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক এবং কয়েকটি মোবাইল যোগাযোগ অ্যাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে৷ তবে অনেকে সেই নিষেধাজ্ঞার দেয়াল টপকে ফেসবুক এবং অন্যান্য সেবা ব্যবহার করছেন৷

https://p.dw.com/p/1H9hN
Demonstrationen in Bangladesch
ছবি: STR/AFP/Getty Images

ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন এবং ট্যাঙ্গো বন্ধ করা হয় গত বুধবার, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখার ঘোষণার পর৷ ইতিপূর্বে এ ধরনের রায় ঘোষণার পর সহিংসতায় অনেক মানুষ মারা গেছে৷ ফলে এবার আগে থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা দেখা গেছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে বিভিন্ন অনলাইন সেবাদাতার উপর নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দেন৷ নিরাপত্তা রক্ষায় এমনটা করা হবে জানান তিনি৷ বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সচিব সারোয়ার আলম নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘‘সরকার ছয়টি অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷''

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ফেসবুক ব্যবহার

বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারির শুরুতে দেড়ঘণ্টা ইন্টারনেট থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ, যদিও সরকারের নির্দেশনা ছিল শুধুমাত্র ছয়টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের৷ বিটিআরসি ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়াকে ‘ভুল বোঝাবুঝির' ফসল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে৷ তবে ইন্টারনেট ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কয়েকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফেসবুকে প্রবেশ করে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের ঘোষণা দেন৷ তারা বিপকল্প উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন উপায়ের কথাও জানান৷

বাংলাদেশের অন্যতম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আরিফ আর রহমান জানিয়েছেন, তিনি প্রক্সি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রবেশ করেছেন যেখানে তার অনলাইন অবস্থান দেখানো হচ্ছে পাপুয়া নিউগিনিতে, যদিও তিনি অবস্থান করছেন বাংলাদেশে৷ অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবের জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে কোনকিছু পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা অসম্ভব৷ কেননা নিষিদ্ধ বিষয়াদি ব্যবহারের বিভিন্ন বিকল্প আছে৷

তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই স্বাভাবিক যে কিছু ‘টেক-সেভি' মানুষ নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন কিংবা ভাইবার, ট্যাঙ্গো ব্যবহার করে কথা বলছেন৷ তবে এটা অস্বীকারের উপায় নেই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক মানুষ এ সব সেবা ব্যবহার করতে পারছেন না, বিশেষ করে যাদের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর উপায় জানা নেই৷''

তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, খোদ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীই ফেসবুক নিষেধাজ্ঞা মানছেন না৷ জুনায়েদ আহমেদ পলক বৃহস্পতিবার তাঁর ফেসবুকে ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতির ছবি প্রকাশ করেন৷ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পাতাটিও নিয়মিত বিরতিতে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আপডেট করা হচ্ছে৷

বর্তমান যুগে নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর?

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগার, প্রকাশক এবং বিদেশি নাগরিকদের উপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে৷ চলতি বছর চারজন নাস্তিক ব্লগার এবং একজন সেক্যুলার প্রকাশক খুন হয়েছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে, মৌলবাদীরা তাদের হত্যা করেছে৷ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' সম্প্রতি নিহত দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে৷ ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে সেদেশে৷ তবে অনলাইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেসবুক এবং কিছু অ্যাপ বন্ধ করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তেমন একটা বদলানো যাবে না৷

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ আলমাস জামান মনে করেন, নিরাপত্তার বিবেচনায় এসব নিষেধাজ্ঞা খুবই দুর্বল সমাধান৷ তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ প্রক্সি কিংবা ভিপিএন ব্যবহার করে এসব নেটওয়ার্কে, এমনকি মোবাইল থেকেও প্রবেশ করতে পারে৷''

‘কার্যকর নজরদারি' প্রয়োজন

ফেসবুক ব্যবহার করেই ঢাকা থেকে ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তর দেন জামান৷ তিনি স্বীকার করেন, অনলাইন নজরদারির কার্যকর ব্যবস্থা বাংলাদেশ এখনও গড়ে তুলতে পারেনি৷ আর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকসংস্থায় একাজে দক্ষ কর্মীরও অভাব রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইন্টারনেট গেটওয়েতে একটি ফায়ারওয়াল বসানো যেতে পারে৷ এভাবে নিয়ন্ত্রণ বেশ সহজ এবং আধুনিক হবে৷''

তবে সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, জঙ্গিবাদ দমন করতে চাইলে অনলাইনের চেয়ে অফলাইনে সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিবাদের প্রতি মানুষ আগ্রহ হচ্ছে কেন তাঁর শিকড় সন্ধান করতে হবে৷''

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে এক সপ্তাহের জন্য ফেসবুক এবং ইউটিউব বন্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার৷ চলতি বছরের শুরুতে কয়েকদিনের জন্য ভাইবার এবং হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছিল, নিরাপত্তার অজুহাতে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ফেসবুকের মতো সেবা এভাবে বন্ধ করাকে সমর্থন করেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য