1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বদলাচ্ছে সাদা-কালোর ধারণা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১২ জুন ২০২০

কালো মানে কুৎসিত!‌ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের স্কুলের নীচু ক্লাসে পাঠ্য বইয়ের এই জ্ঞান হইচই ফেলে দিয়েছে৷ কিন্তু প্রাচীনপন্থিরা যেভাবেই বর্ণ বিচার করুক, আধুনিক সময়ে বদলে যাচ্ছে ধারণা৷

https://p.dw.com/p/3dgNz
Coronavirus Indien Kolkatta Kinder leiden unter Schulschließungen
ছবি: DW/Prabhakar

ইউ ফর আগলি৷ পাশে সেই অ-সৌন্দর্যের চেহারা বোঝাতে এক মহিলার হাতে-আঁকা ছবি, যার পুরু ঠোঁট, চাপা নাক এবং রং কালো৷ হইচই পড়ে যেতে বিব্রত পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্ধমানের ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত দুই শিক্ষককে সাসপেন্ড করেছে৷ শিক্ষামন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন, বিতর্কিত বইটি সরকারের অনুমোদিত পাঠ্য পুস্তক নয়৷ শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা নিজেদের সিদ্ধান্তে বইটি স্কুলে পড়াচ্ছিলেন৷

কিন্তু ঘটনা হলো, অ্যামেরিকায় যেখানে নতুন করে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের সর্বত্র, সেখানে বাঙালির শিশুপাঠ্য বইয়ে শেখানো হচ্ছে, কালো মানে খারাপ!‌কিন্তু এটাই কি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মানসিকতা নয়?‌ যেখানে সিনেমা, সিরিয়ালে নায়ক-নায়িকারা অধিকাংশই প্রথাগতভাবে ‘‌সুন্দর’৷ এমনকী সংবাদ মাধ্যমও এই ধারণার বাইরে নয় যে, সুন্দর মুখই সবসময় দেখাতে হবে৷ বিভিন্ন বাংলা টিভি চ্যানেল দেখলে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হয়৷

সন্দীপন রায়

বহু বছর এরকমই একটি জনপ্রিয় চ্যানেলে কাজ করেছেন সন্দীপন রায়৷ তিনি বলছেন, ‘‌‘‌শুধু চ্যানেল বলে নয় কিন্তু৷ এটা তো আমাদের ভিতরে ঢুকে আছে৷ ছোটবেলা থেকেই৷ মানে জিনে ঢুকে আছে যে, সুন্দর মানে ফর্সা৷ গায়ের রঙ পরিষ্কার৷ মাথায় এক ঢাল কালো চুল হবে, বা সোনালি চুল হবে৷ এবং সাদা চামড়ার প্রতি তো আমাদের বরাবরই একটা আকর্ষণ আছে৷’’

কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলো, আমাদের সিরিয়াল বা সিনেমা কি এতদিন ধরে সেই ধারণাটাকেই আরো পুষ্ট করেনি?‌সংবাদ মাধ্যমে কি বেছে বেছে তেমন মুখগুলোকেই বেছে নেওয়া হয় না?‌ সন্দীপন মেনে নিলেন অভিযোগটা৷ বললেন, ‘‌‘‌অনেক চ্যানেলের ক্ষেত্রেই আমরা প্রথম প্রথম যখন কাজ করছিলাম, বা পরবর্তীকালেও যখন কাজ করেছি, তখন বলা হতো যে, ‘‘‌ওই কালো কালো চেহারার গামছা–গায়ে দিয়ে লোকের বাইট নেওয়া যাবে না৷ একটু ভদ্রলোকের মতো দেখতে হতে হবে৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন৷ ক্যামেরার সামনে যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে লাগে৷ এটা তো আমরা ফেস করেইছি৷ মহিলা বা পুরুষ, দেখতে ভালো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রঙের লোকেদের অগ্রাধিকার, এটা তো বলাই থাকত৷’’

কলকাতার টিভি চ্যানেলের চাকরি ছেড়ে এখন মুম্বইতে কাহিনীচিত্র পরিচালনার স্বাধীন পেশায় নিযুক্ত সন্দীপন রায় বলছেন, সিনেমা, সিরিয়ালেও দীর্ঘদিন ‘ভালো’ দেখতে, বা চকোলেট হিরো মার্কা নায়কেরাই ক্যামেরার সামনে এসে অভিনয় করেছেন, যতদিন না নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, বা ইরফান খানের মতো সাধারণ চেহারার অভিনেতা তাঁদের অসাধারণ অভিনয়ক্ষমতা দিয়ে তাক লাগিয়েছেন৷ সম্ভবত তারই প্রভাব যে, সৌন্দর্য সম্পর্কে লোকের মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে৷ বহিরঙ্গের চটক বা গায়ের রং নয়, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি, সপ্রতিভতাই ক্রমশ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷

তমালী বসু

কলকাতা, তথা ভারতের একটি নামী স্কুলে পড়ান তমালী বসু৷ বছরের পর বছর বিভিন্ন বয়সের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বভাব, আচরণ, প্রবণতা খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সেরকমটাই জানাচ্ছেন৷ বললেন, ‘‌‘‌এখন কিন্তু ওইভাবে দেখছে না ছেলেমেয়েরা৷ আমরা যেটা জানতাম, আমাদের যে (‌সৌন্দর্যের) ‌স্ট্যান্ডার্ডটা ছিল, সেই স্ট্যান্ডার্ডে কিন্তু ওই পারস্পরিক দেখা, যে দেখতে সুন্দর টাইপ হলেই ভালো, এটা কিন্তু নেই৷ আমাদের স্কুলে যেটা দেখি আমি যে, ওরা কিন্তু ওভারঅল পার্সোনালিটির ওপর জোর দেয়৷ মানে, খুব সুন্দর দেখতে অথচ বোকা বোকা, তাদেরকে ওরা মোটেই পছন্দ করে না৷ ফর্সা মানেই অ্যাট্রাক্টিভ, কালো হলে অ্যাট্রাক্টিভ নয়— এই কনসেপ্টটা কিন্তু এই জেনারেশন নিচ্ছে না৷ সুন্দর দেখাটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়৷’’

শিক্ষিকা তমালী বসু খুব জোর দিয়েই বললেন, ‘সুন্দর দেখাটা’ আজকাল আর খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না৷ এটা শেষ ছয়-সাত বছরের একটা প্রবণতা৷ অন্তত তাঁদের স্কুলে৷ মফস্‌সল শহর বা গ্রামের দিকের ছেলে–মেয়েরাও সেটাই ভাববে, তারাও কালো মানে কুৎসিত, ফর্সা মানে সুন্দরের তামাদি তত্ত্বে বিশ্বাসী হবে না, সমসময়ের নিরিখে এই আশা করাটাও বোধহয় মাত্রাছাড়া হবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান