বরিস জনসন কি পারবেন?
২৩ জুলাই ২০১৯কনজারভেটিভ দলের যে ক'জন নেতার ব্যাপক প্রচারণা ও অবস্থানের কারণে ব্রেক্সিটের পক্ষে গিয়েছে গণভোট, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন নয়া প্রধানমন্ত্রী জনসন৷ কথার লড়াইয়ে ব্রিটেনে রাজনীতির ময়দান গরম রাখা আর সমালোচনা কুড়ানোর ক্ষেত্রেও যিনি থাকেন সর্বাগ্রে৷
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সদস্যদের রায় আনতে দুই বছরে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছেন টেরেসা মে৷ গণভোটের আগে ব্রেক্সিট-বিরোধিতা করলেও সেই কাজটি করার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর কাঁধে৷
নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনের কড়া ইইউ-বিরোধী মনোভাবের শুরুটা হয়েছিল আশির দশকের শেষে, যখন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনে ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি৷ তখন থেকেই এই সংস্থায় যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হতে দেখা যায় তাঁকে৷
সেসময় ইউরোপীয় কমিশনে ব্রিটেনের অবস্থান পোক্ত করার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী-খ্যাত মার্গারেট থাচ্যার৷ সবার বিরোধী অবস্থানে গিয়ে ইউরোপীয় কমিশনে ব্রিটেনের ফি কমিয়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি৷
ব্রেক্সিটের আলোচনা করতে গিয়ে থ্যাচারের সে সময়কার শক্ত অবস্থানের উদাহরণ টেনে থাকেন জনসন৷ নতুন প্রধানমন্ত্রীর একটি জীবনীতে উঠে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের সঙ্গে তাঁর বেশ সখ্যতাও ছিল৷
১৯৭৯ সালে থ্যাচার যখন ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন, তখনও বর্তমান সময়ের মতো বহুধা বিভক্ত ছিল টোরি দল৷ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ব্রিটেনকে টেনে তোলার পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন থ্যাচার৷
আবার কনজারভেটিভ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা থ্যাচার৷ নিজ দলের জন মেজরের হাতে ক্ষমতা তুলে বিদায় নেন তিনি৷
জন মেজর সাড়ে ছয় বছর ক্ষমতায় থাকলেও দলের অবস্থান পোক্ত না করে উল্টো খারাপ করেছিলেন৷ তারপর টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় ছিল লেবার পার্টির দখলে৷
দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১০ সালে ডেভিড ক্যামরনের নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি৷ এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও এক বছরের মাথায় বেক্সিটকে কেন্দ্র করে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
থ্যাচারের বিদায়ের ৩০ বছরের মাথায় ব্রেক্সিট নিয়ে সংকটের মুখে ব্রিটেন৷ ক্যামেরনের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে এলেন টেরিসা মে, তাঁকেও বিদায় নিতে হয় ব্রেক্সিট সফল না করেই৷
ব্রেক্সিটের কড়া সমর্থক হওয়ার কারণে মে সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বাছাই করা হয়েছিল জনসনকে৷ কিন্তু ব্রেক্সিটের ধরণ কেমন হবে সেই বিতর্কে পদ ছাড়েন এই টোরি নেতা৷
এলোমেলো সোনালি চুলের বরিস জনসন লন্ডনের সাবেক মেয়র, ব্রিটিশ রাজনীতির এক জনপ্রিয় এবং বর্ণাঢ্য চরিত্র- যার চটকদার কথা এবং বিচিত্র কর্মকান্ড প্রায় সবসময়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়৷
ব্রেক্সিট নিয়ে সফল হতে হলে দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি সংসদে বিরোধ দল লেবার পার্টির সমর্থনও খুব দরকার৷ কারণ বর্তমান সংসদে বড় কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রক্ষণশীলদের৷ আবার টেরিসা মে-এর মতো নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসকেও আস্থা ভোটের দিকে নিয়ে যেতে পারে জেরেমি করবিনের দল৷
বিচিত্র চরিত্রের জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও শিক্ষামন্ত্রী অ্যানে মিলটনসহ কয়েকজন৷ আবার ব্রেক্সিট-বিরোধী অনেকে তাঁর বিপক্ষে একাট্টা৷
রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা বরিস জনসন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতোটা সফল হবেন- তা এখন দেখা বিষয়৷ বেক্সিটের পাশাপাশি তিনি টোরি দলের ভীত শক্ত করতে পারবেন কিনা, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন৷