এক বছরে হাজারেরও বেশি কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার
২৭ মার্চ ২০২২বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের উপর একের পর এক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমগুলোতে৷ প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যার শিকার হচ্ছে তারা৷ বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিবাহের ঘটনাও৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সব তথ্য নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম৷
সংগঠনটির হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের উপর যৌন নিপীড়িন ও নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১১৬টি৷ এর মধ্যে ৮৮ শিশু যৌন নিপীড়ন ভোগ করেছে৷ ২৮ কন্যাশিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে৷
সবচেয়ে ভয়াহ চিত্রটি উঠে এসেছে ধর্ষণের পরিসংখ্যানে৷ গত বছর সারাদেশে এক হাজার ১১৭ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ ১০০ শিশুই ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন৷ মসজিদ, মাদ্রাসাতেও ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন৷ ১৫৫টি শিশু দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ধর্ষণের কারণে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে৷ ধর্ষণের পর ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ চার শিশু নিজেরা আত্মহত্যা পথ বেছে নিয়েছে৷
২৭২ কন্যাশিশুকে গত বছর হত্যা করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ৩৭ জনকে পূর্ব শত্রুতার কারণে, ১৩৪ জন পারিবারিক বিরোধে, ৪৫ জন ধর্ষণের পরে, ২৭ জনকে প্রেমের কারণে, নয়জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়৷ আট অপহৃত শিশু, পাঁচ গৃহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে৷ এছাড়া নির্যাতন, নিপীড়ন, সম্পর্কের টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন কারণে ২০২১ সালে ২৪২ শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে৷
গত বছর গৃহকর্মে নিযুক্ত ৩৫ কন্যাশিশু নির্যাতন ভোগ করেছে৷ যাদের মধ্যে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে৷ মসজিদ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাস্তির নামে নির্যাতন কিংবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে আরো আট শিশু৷ বন্ধ হয়নি মেয়েদের উপর এসিড সন্ত্রাসও৷ ২০২১ সালে ১০ কন্যাশিশুর শরীরে এসিড ছোঁড়া হয়েছে৷
২০২১ সালে ১৯৭ জন মেয়ে শিশুকে অপহরণ ও নয় শিশুকে পাচার করা হয়েছে৷ অপহরণের পর ১০৬ জনকে উদ্ধার করা গেছে৷ পাচার হওয়া নয়জনের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র তিনজন৷
কন্যাশিশুরা গৃহেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ এরমধ্যে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ছয়জন, ১৮ জন নিজ বাড়ি, ছয়জন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে নির্যাতন ভোগ করেছে৷ ৪৭টি ইভ টিজিংয়ের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে সংগঠনটি৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্তত ১৩ কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ৮৭ শিশুকে বিয়ে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷
সংবাদপত্রে উঠে আসা খবর থেকে কন্যাশিশুর প্রতি অবহেলাজনিত ৩৫টি ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম৷ ৩৩ টি ক্ষেত্রে পরিবারের কাছ থেকে তারা পরিত্যাক্ত হয়েছে, দুইটি ক্ষেত্রে শিশুদের বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷