বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রায় যোগ হলো আরেক সাফল্য
২১ নভেম্বর ২০১৪‘‘বাংলাদেশে নারীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না'' – গত সপ্তাহে বনে এক আলোচনায় এমনটাই বলছিলেন এক বিদেশি৷ আরো কয়েকজনের সঙ্গে আমারও সেকথা শুনতে হয়েছে৷ বিশ্বের কয়েকটি দেশে নারীদের দুরবস্থার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করেন৷ এক পর্যায়ে আমি অবশ্য বলতে বাধ্য হয়েছিলাম, সময় অনেক বদলে গেছে৷ বাংলাদেশের নারীরা এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন৷ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কয়েক মিলিয়ন নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন৷
বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে নানাজনের নানা মত রয়েছে৷ অনেকে এখনো মনে করেন রক্ষণশীল সমাজের কারণে বাংলাদেশে নারীরা আগাতে পারছেন না৷ কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি কি সেরকম? পরিসংখ্যান কিন্তু সেটা বলছে না৷ ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক চার শতাংশ৷ ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে ৮১ দশমিক দুই শতাংশ মেয়ে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেছে৷
প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের এই হার অবশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে অনেক কমে যাচ্ছে৷ তবুও কয়েক দশক আগের তুলনায় এটা বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি৷ আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণারত বাংলাদেশি নারী খুঁজে পাওয়া এখন আর দুষ্কর নয়৷ জার্মানির বন শহরেই বেশ কয়েকজন রয়েছেন যাঁরা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন৷
বাংলাদেশের রয়েছে দু'জন এভারেস্টজয়ী নারী৷ নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ এঁদের মধ্যে ওয়াসফিয়া শুধু এভারেস্ট জয় করেই থেমে নেই৷ তিনি বরং সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পেয়েছেন ওয়াসফিয়া৷ আর বাংলাদেশের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলতো মাঝেমাঝে পুরুষদের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের বিচারে৷
নারীদের এই সাফল্যের তালিকায় এবার যোগ হলেন তামান্না-ই-লূৎফী৷ সামরিক বাহিনীর প্রথম পাইলট হিসেবে সফলভাবে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন তিনি৷ সামরিক বাহিনীতে নিঃসন্দেহে নারীদের জন্য এক বিরাট সাফল্য৷
ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নেও নারীরা এখন অনেক এগিয়ে৷ স্বামীর নির্যাতন কিংবা অপছন্দের বিষয়গুলো মুখ বুজে সহ্য করে সংসার করার মতো মানসিকতা এখন অনেকের নেই বলেই মনে হচ্ছে৷ যে কারণে ঢাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে৷ নারীর তরফ থেকে বিচ্ছেদ নেয়ার প্রবণতাও বাড়তির দিকে৷
এতসব সাফল্যের গল্প দিয়ে আমি নারী নির্যাতনের বিষয়টা আড়াল করতে চাচ্ছি না৷ কয়েক বছর আগে দোররার আঘাতে শরিয়তপুরে প্রাণ হারিয়েছে হেনা আক্তার৷ যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন কিংবা হত্যার মতো ঘটনাও গণমাধ্যমে আসে মাঝেমাঝেই৷ এ সব বন্ধে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন৷ তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশে মেয়েদের অগ্রযাত্রার খবরও আরো প্রকাশ হওয়া উচিত৷ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ সব উন্নয়ন বড় করে তুলে ধরা জরুরি৷