‘বাংলাদেশে নিরাপত্তার অভাব বোধ করিনি'
১২ জুন ২০১৮ভেন্যুর রুম বার্লিনে আলাদা একটি সেশনে শুরুতেই ডয়চে ভেলে বাংলার প্রধান দেবারতি গুহ সূচনা বক্তব্য দেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে দেখেছি, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম যোগ করা হলো৷ সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি, বেশ কিছু উগ্রবাদী ঘটনা ঘটলো৷ এমনকি গতকালও একজন প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে, যদিও এখনো জানি না, কারণ কী৷ তবে এটা ঠিক যে, এখানেই ঘটনাগুলো একদম থেমে নেই৷''
এরপর তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়৷ তারপর শুরু হয় আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব৷ সেখানে নির্মাতাদের একজন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক সান্দ্রা পেটার্সমান বলেন, ‘‘আমি যখন এআরডি'র দিল্লি সংবাদদাতা ছিলাম, তখন পাকিস্তান,আফগানিস্তানের খবর সংগ্রহ করার পর যখন বাংলাদেশে যেতাম, তখন মনে হতো, শান্তিতে আছি৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমাকে শুধু এসব ব্লগার, মুক্তমনাদের মৃত্যুর খবরই সংগ্রহ করতে হতো৷ তার মানে, সমাজে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটেছে৷''
তিনি যোগ করেন, ‘‘তবে এবার যখন আমি গিয়েছি, সেখানে ২৪ দিন শুটিং করেছি, এক মুহূর্তের জন্যও কখনো মনে হয়নি, আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি৷ তবে এটাও ঠিক যে, এখানে অনেককে হত্যা করা হয়েছে, তার কারণ তাঁরা ভিন্নভাবে ভাবতেন৷''
তথ্যচিত্রটির অপর নির্মাতা ডয়চে ভেলের আরেক সাংবাদিক হান্স ক্রিস্টিয়ান ওস্টারমানেরও একই মত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এই প্রথম বাংলাদেশে গিয়েছি৷ সত্যি বলছি, আমি খুন-খারাবির যেসব খবর দেখেছি, তাতে শুরুতে একটু শঙ্কিতই ছিলাম৷ কিন্তু পরে সেই শঙ্কা কেটে গেছে৷''
প্রশ্নোত্তর পর্বে অনেকেই আলোচনায় অংশ নেন৷ কেউ কেউ জানতে চান যে, বাংলাদেশকে যেভাবে এখানে দেখানো হয়েছে কিংবা ইসলামকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে পূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে কিনা৷ তখন তাঁরা বলেন, মাত্র ৪২ মিনিটে একটি দেশকে বা একটি ধর্মকে তুলে ধরা সম্ভব নয়৷ তাই একটু ওপর থেকে শুধু সেখানে উগ্র ইসলামপন্থা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা-ই উঠে এসেছে তথ্যচিত্রে৷
সান্দ্রা বলেন, ‘‘অসহিষ্ণুতার যে সংস্কৃতি এখানে গড়ে উঠেছে, তা শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও৷ আমরা সে জায়গাগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷''
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন৷
উল্লেখ্য, জার্মানির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এশিয়া নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন সিরিজ তৈরি করছে, যার নাম ‘জিরো টলারেন্স'৷ লক্ষ্য, বিশ্বের পাঠক, দর্শকদের কাছে এশিয়ার এই দিকগুলো তুলে ধরা৷ সেই সিরিজের প্রথম পর্বটি হয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে, যেটির নাম দেয়া হয়েছে, ‘দ্য ডন অফ ইসলামিজম ইন বাংলাদেশ'৷
এই প্রতিবেদনটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ভ্রমণ করেছে তথ্যচিত্র নির্মাতা দলটি৷ সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরেও গেছেন তাঁরা৷
তথ্যচিত্রটি দেখেছেন? কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷