সাইক্লোন সম্পর্কে আগাম বার্তা
২৪ ডিসেম্বর ২০১৬জেলে রমজান আলী তখনও উপকূল থেকে এসএমএস পাওয়ার মতো দূরত্বে ছিলেন৷ ছেলের বার্তা তিনি দ্রুত অন্যান্য জেলেদের কাছেও পৌঁছে দেন৷ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দ্রুত ডাঙার দিকে ফিরে আসেন তাঁরা৷ ওদিকে কুতুবদিয়ার ছেলে হোসেন শুধু বাবাকে এসএমএস করেই ক্ষান্ত ছিল না৷ বরং সমুদ্র উপকূল থেকে মাত্র একশ মিটার দূরত্বে থাকা তার গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাইক্লোন ধেয়ে আসার কথা জানায় সে৷ আর তারপর নিজের পরিবার এবং এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে ছয় কিলোমিটার দূরের সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়৷
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হোসেন স্কুলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিখেছে৷ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতির মাত্রা কমাতে ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন' এবং মানবিক সহায়তা বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশন ইসিএইচও-র সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার শিশুদের বিশেষ এই শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে এগারো বছর বয়সি তাসফিয়া সুলতানার মতো শিক্ষার্থীরা এখন স্কুল, মসজিদ বা অন্যত্র লাল পতাকা প্রদর্শনের মানে জানে৷ উপকূলীয় এলাকায় লাল পতাকা প্রদর্শনের অর্থ হচ্ছে একটি সাইক্লোন এগিয়ে আসছে৷ তবে কখনো একটি, কখনো একসঙ্গে দু'টি বা তিনটি পতাকা দেখানো হয়৷ সেসবেরও আলাদা আলাদা অর্থ এখন বোঝে শিক্ষার্থীরা৷
একটি লাল পতাকার অর্থ হচ্ছে গ্রামের মানুষদের সাইক্লোনের কথা জানাতে হবে, দু'টি পতাকা দেখানোর অর্থ হচ্ছে সবাইকে নিজেদের বাড়ির মধ্যে আশ্রয় নিতে হবে আর তিনটি পাতাকার অর্থ হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টার বা মজবুত অন্য কোনো আশ্রয়ে যেতে হবে, জানায় সুলতানা৷ সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিক্ষা পরিচালক জুলফিকার বুশরা জানান, বাংলাদেশের ৬৫,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩৫,০০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকহাজার অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে চান তারা৷
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে এক সাইক্লোনে বাংলাদেশে তিন লাখের বেশি মানুষ মারা যায়৷ ১৯৯১ সালে আরেক সাইক্লোনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি৷ তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে সাইক্লোনে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ কমে এসেছে৷ ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডর আকারে বড় হলেও প্রাণহানির সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজারের মতো৷ আর ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় প্রাণ হারায় চারশ'রও কম মানুষ৷
এআই/ডিজি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে সরকারের তরফ থেকে কী করণীয়? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷