বাংলাদেশের প্রশংসায় ভারত
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮সামনেই বিধানসভা ভোট উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত রাজ্য ত্রিপুরায়৷ সেখানে প্রচারে গিয়ে বিজেপি নেতা, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ঢালাও প্রশংসা করলেন প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং সেখানকার ‘বন্ধু' সরকারের৷ বললেন, ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে৷ তার কারণ, সীমান্তের ওপারে জঙ্গির যতগুলো ঘাঁটি এলাকা ছিল, সামরিক অভিযান চালিয়ে সেগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ফলে এপারে তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা আর ওপারে গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারছে না৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার বলেন, বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতার কারণেই ত্রিপুরায় শান্তি ফেরানো সম্ভব হয়েছে৷ সম্প্রতি সিলেটের হবিগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে বাংলাদেশের ‘র্যাব'৷ বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্রের মধ্যে ত্রিপুরার এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কিছু পোস্টারও ছিল৷ ভোটের আগে ত্রিপুরায় জঙ্গি নাশকতা বাড়ানোর ছক কষা হয়েছে আন্দাজ করে৷ তারপর থেকেই সীমান্ত বরাবর পাহারা এবং টহলদারি বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের বিএসএফ৷ সেই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই আশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷
ত্রিপুরার বিজেপি নেতা বিপ্লব দেব ডয়চে ভেলেকে প্রত্যাশিতভাবেই এক কথা বললেন৷ তিনিও বারবার বললেন প্রতিবেশী বাংলাদেশের বন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা৷ ভারত-বাংলাদেশ চলতি সুসম্পর্কের জেরেই যে জঙ্গি সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে, সেকথা তিনি বারবার বললেন৷ কারণ, বিপ্লব দেবের মতে, এর আগে শুধু ত্রিপুরা নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতেই জঙ্গি নাশকতা পরিচালনা করা হতো বাংলাদেশে বসে৷ কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রের ভূমিকায়৷ ফলে ত্রিপুরার জঙ্গি সংগঠন ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা' হোক, বা আসামের ‘উলফা', বা মনিপুরের জঙ্গিরা, সবাইকে দমন করতে সফল হয়েছে ভারত সরকার৷ বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের আমলেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ পাশাপাশি ত্রিপুরার সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সুফলও পাওয়া গেছে, সীমান্তপার জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া গেছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতা বিপ্লব দেব৷
আর ত্রিপুরায় যে বামপন্থিরা ক্ষমতায় আছে, তাঁরা কী ভাবছেন? কথা বলে দেখা গেল, অন্তত এই একটি বিষয়ে তাঁরা কেন্দ্রের বৈরি বিজেপি সরকারের সঙ্গে একমত৷ ত্রিপুরা সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর ডয়চে ভেলেকে জানালেন, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের জঙ্গি বিরোধী তৎপরতার সুফল ত্রিপুরায় পাওয়া যাচ্ছে৷ যদিও বাংলাদেশে সমস্ত জঙ্গি ঘাঁটি নির্মূল করে দেওয়া গেছে, বা ত্রিপুরাতে, কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনা পুরোপুরি দূরে সরিয়ে ফেলতে পেরেছে সরকার, এমন কোনও দাবি বিজনবাবু করছেন না৷ বরং তাঁর আশঙ্কা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ভবিষ্যতে ফের নতুন কোনো চেহারায় মাথা চাড়া দেবে৷ তবে এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় জঙ্গি তৎপরতা যে নিয়ন্ত্রণে, এবং বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার কারণেই যে এটা সম্ভব হয়েছে, সে নিয়ে শাসক বামপন্থিদেরও কোনো সন্দেহ নেই৷
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷