ভারতে বাংলাদেশি জঙ্গি আটক
৮ আগস্ট ২০১৭সন্দেহভাজন বাংলাদেশি সন্ত্রাসীরা ভারতকে কি তাদের দ্বিতীয় গোপন ডেরা বানাতে সক্রিয়? আপাতদৃষ্টিতে সেটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক৷ ভারতে অন্তর্ঘাতমূলক চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গত রবিবার উত্তর প্রদেশের অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াড (এটিএস) গ্রেপ্তার করে আবদুল্লাহ আল-মামুন নামে এক বাংলাদেশি জঙ্গিকে৷ পুলিশের অভিযোগ, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী এবং উদারমনস্ক আন্তর্জাতিক ব্লগারদের হত্যার জন্য আনসারুল্লা বাংলা টিম নামে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পুলিশের নজরদারির মধ্যে আছে, আবদুল্লাহ'র সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ঘনিষ্ট৷ তদন্তকারীদের হাতে নাকি এমনই তথ্য আছে৷ শুধু তাই নয়, জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গেও নাকি তার যোগ ছিল৷ ভারতে মুসলিম তরুণদের সন্ত্রাসী কাজের জন্য নিয়োগ করতো আবদুল্লাহ৷ আর তারপর, আল-কায়েদার প্রভাব ও প্রক্রিয়ায় চলতো তাদের মগজ ধোলাই৷
উত্তর প্রদেশ পুলিশের বড়কর্তা আনন্দ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল্লাহ সন্ত্রাসীদের, বিশেষ করে বাংলাদেশি জঙ্গিদের আশ্রয় দিত৷ তাদের জন্য ভুয়ো পরিচয়-পত্র এবং জাল কাগজ-পত্র তৈরি করে দিত৷ নিজের পরিচয়-পত্রও তৈরি করেছিল সে জাল আধারকার্ডের ভিত্তিতে৷ এই কাজে তাকে সাহায্য করতো ফয়জান নামে আরেক বাংলাদেশি৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ জানায়, উত্তর প্রদেশের দেওবাঁধে থাকাকালীন সে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করতো নানাভাবে, যাতে মূলত বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের নিরাপদে ভারতে ঘাঁটি গেড়ে থাকতে পারে৷ ভুয়ো পরিচয়-পত্র এবং অন্যান্য নথিপত্র তৈরি করতে তাকে সাহায্য করতো ফয়জান৷ সে-ও থাকতো দেওবন্দে৷ উল্লেখ্য, ভারতে ইসলামিক শিক্ষাদীক্ষা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বড় কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ৷ এই ইসলামিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৬৬ সালে শাহারানপুরে৷ মৌলবাদী উলেমারা বিভিন্ন বিষয়ে ফতোয়া জারি করে থাকেন সেখানে৷ যেমন পুরুষ ও মহিলা একসঙ্গে বাইরে গেলে মহিলাদের আপাদমস্তক ঢাকা থাকতে হবে, মানে বোরকা না পরলে বাইরে বের হওয়া নিষেধ৷ লেখক সলমান রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি করে এই দেওবন্দ উলেমারাই৷ তাঁদের দাবি ছিল, রুশদি মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগে আঘাত করেছেন৷
সোমবার মুজফ্ফরনগর আদালত সন্ত্রাস দমন স্কোয়াড বা এটিএসকে আবদুল্লার ট্রানজিট জামিন মঞ্জুর করেন৷ নিজেদের হেফাজতে নেবার জন্য আজ তাঁকে লক্ষৌ আদালত পেশ করার কথা৷ আবদুল্লাহ'র আসল বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিং জেলায়৷ গত ছ'বছর দেওবন্দে থাকার পর মাসখানেক আগে আবদুল্লাহ মুজফ্ফরনগরে ডেরা বাঁধে৷ পুলিশ তাঁর ডেরা থেকে উদ্ধার করে একটি পাসপোর্ট, আধারকার্ড, ১৩টি পরিচয়পত্র, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার, তহশিলদার এবং নির্বাচন অফিসারের নামাঙ্কিত স্ট্যাম্প বা শিলমোহর৷ এছাড়া তল্লাসিতে পাওয়া যায় একটি কালার প্রিন্টার, বোমা বানাবার পদ্ধতি সংক্রান্ত কাগজপত্র, জেহাদি বইপত্র ইত্যাদি৷ সন্ত্রাস বিরোধী স্কোয়াড ফয়জানকে অবশ্য এখনও ধরতে পারেনি৷ গতিক বুঝে সে অজ্ঞাতস্থানে গা ঢাকা দিয়েছে৷ তাকে খুঁজতে জঙ্গি দমন শাখা হানা দেয় পশ্চিম উত্তর প্রদেশের সামলি, শাহারানপুর এলাকায়৷ পুলিশ আরও কয়েকজনকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে৷
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করতে দিল্লি ও ঢাকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ শেখ হাসিনা সরকার এবং মোদী সরকারের মধ্যে মন্ত্রী, আমলা ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা হয়৷ সীমান্তে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি, চোরা চালান, অপরাধীদের প্রত্যর্পণ, মাদক ও নারী পাচার সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করার কথা বলা হয়৷ ঢাকার গুলশন কাফেতে জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের বড় রকমের জঙ্গি হামলার অন্যতম চাঁই ইদ্রিশ আলিকে কলকাতার বড়বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ পুলিশ বাহিনী গত বছর৷ চোরাপথে ঢুকে ভাষাগত সুবিধার দরুণ ঐ সন্ত্রাসী জাল পরিচয়-পত্র নিয়ে লুকিয়েছিল কলকাতায়৷ গুলশন কাফের জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৯ জন৷ তার মধ্যে ১৭ জন বিদেশি৷ গুলশন কাণ্ডে মুম্বইয়ে অবস্থিত ইসলামি ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েকের টেলিভিসন থেকে মৌলবাদী ধর্মপ্রচারের প্রভাব আছে বলে মনে করে ঢাকা৷ বাংলাদেশের অনুরোধে দিল্লি তাঁকে ধরার জন্য উঠেপড়ে লাগে৷ কিন্তু ধরার আগেই জাকির ভারতের বাইরে চলে যায় আর ফিরে আসেনি গ্রেপ্তারের ভয়ে৷ তার মুম্বইয়ের বিষয় সম্পত্তি পুলিশ আটক করে৷ বাতিল করে পাসপোর্ট৷ রেড কর্নার নোটিসও জারি করে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাকে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি৷