শহরে শিশু শ্রমিক
২৬ জুন ২০১৩স্বোচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যাসিসটেন্স ফর স্লাম ডুয়েলার্স (এএসডি)' বা বস্তিবাসীর সাহায্য সংগঠন জার্মানির ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড' নামের একটি চ্যারিটি সংগঠনের সহায়তায় ঢাকায় শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে কাজ করছে৷ রাজধানীর বাসা-বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে এরকম ৩০০ শিশুর ওপর গবেষণা করেছে তারা৷ এএসডি-র গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাজধানীর অন্ততপক্ষে ৪৫ ভাগ বাড়িতে শিশুরা গৃহকর্মে নিয়োজিত৷ আর তাদের অধিকাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছর৷
এএসডি-র গবেষক আব্দুল্লাহ জাফর ডয়চে ভেলেকে জানান, এই শিশুরা গৃহে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে৷ তাদের ধারালো বস্তু বা খুন্তি দিয়ে আঘাত করা হয়৷ তাদের ক্ষমতার বাইরে ভারি বস্তু বহন করতে হয়৷ দীর্ঘ সময় ধরে গরম চুলার পাশে অবস্থান করতে হয় তাদের৷
এখানেই শেষ নয়৷ কাজের পরও তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হয় না৷ আর ঘুমাতে দেয়া হয় অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর জায়গায়৷ এভাবেই তারা সহানুভূতিহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ এই শিশুদের জন্য কোনো শ্রমঘণ্টা নির্দিষ্ট নেই৷ নেই কাজের কোনো চুক্তি বা লিখিত নিয়োগ-পত্র৷ এত সব কাজের পরও তাদের বেতন মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা৷ উল্লেখ্য যে, গৃহ কর্মে নিয়োজিত এই শিশুদের মধ্যে ৮০ ভাগই মেয়ে৷ ফলে তাদের ওপর যৌন নির্যাতনও চালানো হয়৷ এমনকি ছেলেরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়৷
আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার বাসা-বাড়িতে প্রায় দেড় লাখ শিশু কাজ করে৷ এই শিশুরা সাধারণত গ্রাম থেকে আসে৷ শহরে গৃহকর্মে নিয়োজিত হওয়ায় তাদের নেই দুরন্ত শৈশব৷ আনন্দহীন জীবনে তাদের সামনে এক ধুসর ভবিষ্যত ছাড়া আর কিছুই নেই৷ পড়াশোনা তো দূরের কথা, অসুস্থ হলে চিকিত্সাও হয় না তাদের৷ আব্দুল্লাহ জাফর বলেন, শিশুদের গৃহকর্মে শ্রম দাস বানানো হচ্ছে৷ এরা শিশু শ্রম দাস – যা আমাদের জন্য লজ্জা এবং অপমানের৷
তিনি বলেন, সরকার শিশু অধিকার আইন করেছে৷ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করেছে৷ কিন্তু গৃহকর্মে নিয়োজিত এই শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ তাই শুধু আইন করলে হবে না, এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ আর যারা গৃহকর্মে শিশুদের নিয়োগ করছেন, তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে৷ এই শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেন না করানো হয়, সেটা দেখতে হবে৷ এছাড়া, কাজের ফাঁকে তাদের পড়াশোনা এবং চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ, সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধের কথা বললেও বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক অবস্থায় তা সময় সাপেক্ষ৷