বাঙালির বেড়ানো এবার পণ্ড!
২৯ জুন ২০২০অন্যান্য বছর ঠিক এই সময় খুলে যায় রেলের অগ্রিম বুকিং এবং ঝাঁপিয়ে পড়েন বাঙালি পর্যটকেরা৷ কার্যত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় জনপ্রিয় রুটগুলোর সমস্ত ট্রেন টিকিট৷ বিমানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়৷ যে বিমান সংস্থা যখন থেকে আগাম বুকিং চালু করে, দেশে এবং বিদেশের জনপ্রিয় পর্যটক–গন্তব্যে যাতায়াতের উড়ান ভর্তি হয়ে যায় হু হু করে৷ শরতের স্কুল, কলেজ, অফিস, কাছারির ছুটি থেকে যে পর্যটন মরসুমের শুরু হয়, চলে সেই পরের বছর জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত৷ সেই বহু পুরানো নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে গেল এই বছর৷ কারণ অবশ্যই করোনা–আতঙ্ক৷ এখনও যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়নি৷ পর পর দুবার অগ্রিম বুকিং চালু করেও ট্রেন বাতিল হয়েছে৷ শেষ খবর, আগস্টের মাঝামাঝি লোকাল ট্রেন চালু হলেও হতে পারে৷ তবে সেটা পরিস্থিতি বুঝে৷ কাজেই ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ারও কোনও সুযোগ বা আগ্রহ তৈরি হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও নেই এখনও৷
সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পর্যটকের বহু বছরের সফরসঙ্গী ‘কুন্ডু স্পেশাল’৷ সারা ভারতের দর্শনীয় স্থান কম খরচে ঘুরিয়ে আনার পাশাপাশি তীর্থযাত্রার আয়োজনে এদের বিশেষ প্রসিদ্ধি৷ সেই পর্যটন সংস্থার কর্মী বিজন দাসের গলা রীতিমত বিষন্ন শোনাল৷ তিনি বললেন, ‘‘(বুকিং) যা ছিল, সবই তো ক্যানসেল করলাম করোনার জন্য৷ এখন তো শুধু টাকা ফেরত দেওয়ার পালা চলছে৷ আগস্ট অবধি যা ছিল, বুঝতেই পারছেন৷ এখন সবদিক কবে, মানে পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে, বোঝা যাচ্ছে না৷’’ কিন্তু শরতের, অর্থাৎ দুর্গাপুজোর ছুটি পড়তে এবছর দেরি আছে৷ অক্টোবরের শেষ৷ তাও ওঁরা ভরসা পাচ্ছেন না৷ বিজনবাবু বললেন, ‘‘আমরা এখনও অক্টোবর অবধি ঠিক...যতদিন না এগুলো স্বাভাবিক হচ্ছে, সব স্টেট থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছি, কিচ্ছু ঠিক করতে পারছি না৷ এখন সবই বন্ধ আছে৷ এই মুহূর্তে কিছু বোঝা মুশকিল৷’’
দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালি পর্যটক বিদেশে বেড়াতে যেতে শুরু করেছে বেশ কয়েক বছর হলো৷ তাদের জন্যেও এই সময় কাগজে, টিভিতে বিজ্ঞাপনে থাকে নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজ৷ এই করোনার বছরে তাও চোখে পড়ছে না৷ নিয়ম রক্ষায় পর্যটন সংস্থাগুলো রোজ দপ্তর খুলছে বটে, কিন্তু খোঁজ নিতে কেউ আসছে না৷ দক্ষিণ কলকাতার এক নামী পর্যটন সংস্থা ‘হিক এ উবিক’–এর নবীন পরিচালিকা ঋতিকা দত্ত বললেন, ‘‘বিদেশগুলোর (বুকিং), আর ডোমেস্টিক বুকিংও চার মাস আগে খুলে যায়৷ চার মাস আগে মানে এখনই৷ কিন্তু ট্রেনের বুকিংও খোলেনি৷ আন্তর্জাতিক সীমান্তও বন্ধ৷ ইন্ডিয়া বর্ডার বন্ধ রেখেছে, ইনফ্যাক্ট ইন্ডিয়ার জন্য বাকিরাও বর্ডার বন্ধ রেখেছে৷ ইন্টারন্যাশনাল, ডোমেস্টিক (ফ্লাইট বুকিং) কোনওটাই এখনও হচ্ছে না৷ কোনও এনকোয়্যারিও নেই৷ পুজোর (ছুটির) জন্যে কিচ্ছু নেই৷ আছে, সেটা নভেম্বর–ডিসেম্বরের জন্যে৷’’
ঋতিকা জানাচ্ছেন, লোকে যেহেতু ভয় পাচ্ছে, গণপরিবহণ, অর্থাৎ দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, বিমান ব্যবহার করে কেউ কোথাও ঘুরতে যাবেও না৷ কাছাকাছি জায়গায় হয়ত ঘুরতে যাবে, যেখানে নিজেরা গাড়িতে যেতে পারে৷ সেই জন্য কিছু হোটেল বুকিং হলেও হতে পারে৷ এছাড়া প্লেনে বুকিং হচ্ছে৷ যারা আটকে আছে, কিংবা কাজের সূত্রে কোথাও যেতে হবে, তারা যাচ্ছে৷ তা ছাড়া কিছু হচ্ছে না৷
তা হলে কি এ বছরের মতো বেড়ানো বন্ধ সবার? ঋতিকা বললেন, ‘‘পুজোর কিছু (বুকিং) নেই৷ যদি হয়... আমরা আশা করছি ডিসেম্বরে মার্কেট আবার উঠবে৷ ডিসেম্বর–জানুয়ারি৷ যদি ২৫ ডিসেম্বরের পর হয়, তখন হবে, না হলে হবে না৷’’
কাজেই ভ্রমণবিলাসী বাঙালির পায়ে ততদিন বাঁধাই থাকছে করোনা আতঙ্কের শেকল৷ ইচ্ছে থাকলেও কোথাও যাওয়া যাবে না৷
এক জুনের ছবিঘরটি দেখুন...