নতুন বাজেট সার্বিকভাবে ইতিবাচক
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭প্রথা ভেঙে এই প্রথম রেল ও সাধারণ বাজেট একসঙ্গে সংসদে পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং পরিকাঠামোর বিকাশকে৷ সার্বিক লক্ষ্য দারিদ্রমোচন এবং আয়বৃদ্ধি৷ গ্রামীণ পরিকাঠামোর কাজে বাড়ানো হয়েছে অর্থ বরাদ্দ৷ প্রতিদিন তৈরি হবে ১৩৩ কিলোমিটার রাস্তা, থাকবে দূষণমুক্ত পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা৷ গ্রামে অন্তত এক কোটি পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে আনা হবে৷ কৃষকদের জন্য থাকছে নতুন ফসল বীমা এবং পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁদের আয় দ্বিগুণ করার সংস্থান রাখা হয়েছে বাজেটে৷ কৃষি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ আর বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ লক্ষ কোটি টাকা৷
নোট বদলের সিদ্ধান্ত ভারতীয় অর্থনীতির দিক থেকে এক সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র৷ নোট বদলের অভিঘাত আগামী বছর আর থাকবে না৷ নোট বদলের সাফাই দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধীর উক্তির উদ্ধৃতি তুলে বলেন, কোনো মহত উদ্দেশ্য কখনও ব্যর্থ হয় না৷ নোট বাতিলের ক্ষতে মলম লাগাতে এই বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করে এবং কর্পোরেট করের বোঝায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়৷ ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছোট ও মাঝারি শিল্প৷ এই ক্ষেত্রকে লাভজনক ও প্রতিযোগিতামূলক কোরে তুলতে করের হার ৩০ থেকে কমিয়ে করা হয় ২৫ শতাংশ৷ পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পত আরও সাফ করা হয়৷ বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদের লাল ফিতার অবলুপ্তি ঘটাচ্ছে সরকার৷ আগে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রথমে দরকার হোত পর্ষদের অনুমোদন৷ এবার থেকে অর্থ মন্ত্রক নিজেই সরাসরি তার ছাড়পত্র দিতে পারবে৷ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিকে উৎসাহ দিতে এটা এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা৷ ব্যক্তিগত আয়কর কমানোর কথা বলা হয়েছে বাজেটে, যেটা মধ্যবিত্তদের কিছুটা স্বস্তি দেবে৷ আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে আগেকার ১০ শতাংশ থেকে নামিয়ে করা হয়েছে পাঁচ শতাংশ, যাতে বেশি লোক স্বেচ্ছায় আয়কর দিতে এগিয়ে আসেন৷
বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হলো, রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে চাঁদা দেওয়া৷ বলা হয়, সর্বাধিক দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নগদে দেওয়া যাবে, তার বেশি হলে দিতে হবে চেকে কিংবা ডিজিটাল মাধ্যমে৷ এছাড়া দেওয়া যাবে বিশেষ ইলেক্টোরাল ডোনার বন্ড কিনে৷ সব রাজনৈতিক দলকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে৷ এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল সম্পর্কে জনমানসে যে খারাপ ধারণা ছিল, তা অনেকাংশে দূর হবে৷ পার্টির তহবিল হবে দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ৷
এই বাজেট সম্পর্কে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, বাজেট মোটামুটি ইতিবাচক৷ বিমুদ্রাকরণ বাদ দিয়ে এই বাজেটকে বিচার করা ঠিক হবে না৷ বাজেটে সাধারণ মানুষের মন পাবার একটা চেষ্টা রয়েছে৷ ছোট ও মাঝারি শিল্পে বা ব্যবসাপাতিতে করের হার কমিয়ে করা হয়েছে ২৫ শতাংশ৷ দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে নেমে হয়েছে ৩ শতাংশে৷ তবে হ্যাঁ, সবকিছুরই একটা উল্টো দিক আছে৷ এতে করে রাজকোষ ঘাটতি বাড়বে৷ তবে বাড়লে চিন্তা নেই৷ চিন্তা, সেই বৃদ্ধিটা কীভাবে তা পূরণ করা হবে৷ কর বাড়িয়ে তা করা যায়, কিন্তু তা করা হয়নি৷ ঋণ নিলে তা শোধ করতে সুদ দিতে হতো৷ অতিরিক্ত নোট ছাপানো যেত, কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ৷ তাই আমার মনে হয় নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটা সরকারের হটকারিতা৷ এর অভিঘাত কী হতে পারে, সবাই তা সঠিক আন্দাজ করতে পারেনি৷ সেটা বিপরীতমুখী করার চেষ্টা মোদী সরকার বাস্তবায়িত করতে পারবে কিনা, সেবিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়৷''
নতুন রেল বাজেটও ইতিবাচক৷ যাত্রিভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব নেই বটে তবে খরচ ও প্রতিযোগিতার মোকাবিলা করতে দরকার হলে বাড়ানো হোতে পারে৷ জোর দেওয়া হয়েছে যাত্রী নিরাপত্তার দিকে, যার মধ্যে আছে রক্ষীবিহীন লেবেল ক্রসিং তুলে দেওয়া৷ যাত্রী সুরক্ষায় বরাদ্দ করা হয় এক লাখ কোটি টাকা৷ ই-রেল টিকিটে ‘সারচার্জ' নেওয়া হবে না৷ নতুন মেট্রো রেল নীতিতে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বুলেট ট্রেনের অঙ্গিকারই সার, তা নিয়ে একটি কথাও নেই৷ সম্ভবত সরকার বুঝতে পেরেছেন পরিকাঠামো বা আর্থিক সামর্থ্য কোনোটাই সরকারের নেই৷ স্টেশনে স্টেশনে সৌরশক্তির ব্যবহার বা ট্রেনে বায়ো-টয়লেটের কথা আগের বাজেটেও বলা ছিল, কিন্তু কার্যকর হয়নি৷
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের এটা তৃতীয় বাজেট৷ যথারীতি কংগ্রেসসহ বিরোধিদলগুলি এর সমালোচনায় গলা মিলিয়েছে৷
এই বাজেট সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? জানান আমাদের, নীচের ঘরে৷