‘বিদেশি বিদ্বেষের ঘটনা জার্মানির ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে'
২৪ আগস্ট ২০১৫ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলি শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ তাদের প্রতিবেশী দেশগুলির অবস্থাও ভালো নয়৷ কারণ সে সব দেশের মধ্য দিয়েই শরণার্থীরা উত্তরের সমৃদ্ধ সমাজে যাবার চেষ্টা করছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জার্মানিই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী গ্রহণ করছে৷ কিন্তু কিছু অপ্রিয় ঘটনা জার্মানির ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সহ সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ জার্মান পত্রপত্রিকাগুলিতে শরণার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ বিষয় হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে৷ বিশেষ করে পুবের স্যাক্সনি রাজ্যে হাইডেনাউ শহরে শরণার্থী শিবিরের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঘটনার তীব্র নিন্দা শোনা যাচ্ছে৷
দৈনিক ‘ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং' এক সংবাদভাষ্যে লিখেছে, ‘‘জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বিদেশি বিদ্বেষ ও বর্ণবাদ যেভাবে বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, তা সত্যি লজ্জাজনক৷ অনেকে শরণার্থী শিবির বা তাদের আশ্রয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে ও সক্রিয় হয়ে উঠছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি জনতা মদ্যপান করে বিয়ারের বোতল, আতশবাজি ও পাথর নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে৷ শুধু শরণার্থী নয় – তারা জার্মানির সংখ্যাগুরু মানুষকেও ভয় দেখাতে চায়, যারা শরণার্থীদের প্রতি সহায়তা ও সহানুভূতি দেখাচ্ছেন৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রিকরণের ২৫ বছর পর এনপিডি-র মতো চরম দক্ষিণপন্থি দল গোটা বিশ্বে জার্মানির ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করছে৷''
‘ডি ভেল্ট' সংবাদপত্র এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছে, যে স্যাক্সনি রাজ্য কয়েক দশক ধরে উগ্র দক্ষিণপন্থিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে৷ তা সত্ত্বেও পর পর দুই রাত ধরে পুলিশ কী ভাবে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই সুসংগঠিত জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লো, তা একেবারেই বোধগম্য নয়৷ রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস উলবিশ চরম দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ না নিয়ে একেবারে অনভিজ্ঞের মতো পুলিশকে আগুনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, শরণার্থীদের মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন এবং গোটা বিশ্বে জার্মানির ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছেন – এই মন্তব্য করেছে ‘ডি ভেল্ট'৷
‘রাইন সাইটুং' সংবাদপত্রও স্যাক্সনি রাজ্যের হাইডেনাউ শহরের পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছে৷ এই সংবাদপত্রের মতে, ‘‘রাজ্য হিসেবে স্যাক্সনি বিদেশি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম চালাচ্ছে, তার মধ্যে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে৷ শরণার্থীদের বিষয়ে রাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত কম৷ তাদের আশ্বস্ত করার বদলে শাসক সিডিইউ দল দক্ষিণপন্থিদের সুরে সুর মিলিয়ে সীমান্তে আবার নজরদারি চালু করার দাবি জানাচ্ছে৷ বিদেশি বিদ্বেষের উৎস খোঁজা এবং মানুষকে ব়্যাডিকাল ভাবধারা থেকে দূরে রাখার উদ্যোগ নেওয়ার বদলে রাজ্য সরকার নিজেদের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিজ্ঞাপনের পেছনে ৬৪ লক্ষ ইউরো ব্যয় করছে৷ অসহনীয় এই বিদেশি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেবার সময় এসে গেছে৷''
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: জাহিদুল হক