আবার হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি
১৮ জুন ২০১৫গত ১৬ জুন আবার হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবার তালিকায় এসেছে ২৫ জনের নাম৷ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও আছেন এবারের তালিকায়৷
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ব্লগার আরিফ জেবতিক এ বিষয়ে লিখেছেন৷ লেখার শুরুতেই ক'দিন পর পর আনসারুল্লাহর এমন হুমকি দেয়ার বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যখন হত্যায় মেতে উঠে, তখন তারা কোনো আগাম লিস্ট ধরিয়ে দেয়নি৷ খুব নীরবে তারা পরিকল্পনা করেছে, অনুসরণ করেছে, রেকি করেছে তারপর খুন করে ফেলেছে৷ অভিজিৎ রায় ছাড়া বাকি যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, অনলাইনে অফলাইনে তাঁদের বেশিরভাগই একনামে চিনে ফেলার মতো অনেক নামডাকওয়ালা ছিলেন না৷ আর অভিজিৎ যে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে এসেছিলেন, সেটাও তারা ঠিকই খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল৷ যারা মারা গেছেন – তাঁরা তাঁদের কাজ করতেন আর আনসারউল্লাহও ঠিকঠাকই তাঁদের চিহ্নিত করেছিল৷ খুনের দায় স্বীকার করে তারা তাদের একাউন্টে টুইট করেছে, কোনো সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়নি৷
ইদানীং তাদের নামে আগাম যে তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে সেটা তাদের পূর্ববর্তী কাজের সঙ্গে যায় না৷ তারা যদি তাদের নীরব কাজকর্ম বাদ দিয়ে মাসে মাসে লিস্ট আপডেটের কাজ শুরু করে তাহলে আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারি বটে৷''
তবে তালিকা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও প্রকাশ করেছেন আরিফ জেবতিক, ‘‘এই লিস্ট সত্যি হতে পারে আবার ভূয়াও হতে পারে, লিস্টে থাকা লোকজনকে ভয় দেখাতে অন্য কারো শত্রুতা হতে পারে, এমনকি অন্য কোনো বিষয়ও হতে পারে৷ এর আগেও হেফাজতের সময় কিছু লিস্ট বাজারে এসেছিল যেখানে গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন বহু পরিচিত কর্মীর নামের মধ্যে অপরিচিত অনেকের নাম দেখে আমরা বিশ্মিত হয়েছিলাম এবং লিস্টের উৎস নিয়ে ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম৷''
অবশ্য তারপরও যাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে তাঁদের সতর্ক করতে আরিফ লিখেছেন, ‘‘দয়া করে সাবধানে থাকুন৷ কিন্তু এই লিস্টকে চূড়ান্ত ভেবে আপনারা যাঁরা আপাত প্রাদপ্রদীপের বাইরে আছেন, তাঁরা দয়া করে নিজেদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব দিয়েন না৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ কয়েকজনের ব্যাপারেই জানি, আনসারউল্লাহর কাজের প্যাটার্ন দেখে বুঝা যায় যে এই কয়জন কী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে আছেন৷ এই ঝুঁকির মানুষেরা মিডিয়ার আলোয় আলোকিত নন, রোজ ঘর ছেড়ে অফিসে যান আর ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট কিংবা কলা-পাউরুটি কেনেন৷ এদের জন্য কেউ আগেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না৷ এরা চাকুরি ছেড়ে, বাজার করা ছেড়ে দিয়ে বসে খাওয়ার মতো সুযোগও পাবেন না কোনোদিন৷ এই লোকগুলোকে আমি সাবধানে থাকতে অনুরোধ করি৷ অন্য কারো জন্য নয়, শুধু নিজের জন্য, ঘরে থাকা বৃদ্ধা মা অথবা তুলতুলে পায়ে হাঁটতে থাকা ছোট্ট শিশুটির জন্য আপনি নিরাপদে থাকুন৷ সর্বোচ্চ সাবধানে থাকুন৷ এ সব লিস্টিফিস্টির কৃষ্টিতে বিভ্রান্ত হয়ে দয়াকরে গা ছাড়া দিয়েন না৷
সাহিত্যিক বন্দনা কবীর আনসারুল্লাহর এই পর্যায়ের হুমকির আগেই অন্য একটি দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘ক'দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে, নাস্তিক/ব্লগার হত্যার হিট লিস্টে এখন শীর্ষে আছেন ড. মুহম্মাদ জাফর ইকবাল স্যার আর ডা. ইমরান এইচ সরকার৷ এদের দু'জনের একজনের কল্লা না পড়া পর্যন্ত ব্লগার হত্যা থামবে না৷ এবং এদের দু'জনের একজনের কল্লা পড়ার পরেই সরকার এই হত্যাকারীদের দমনে নামবে, নচেৎ সরকারের টনক নড়বেনা৷ কথাগুলোকে এতদিন নিছক ‘আন্দাজি' কথাবার্তা বলে উড়িয়ে দিলেও এখন আর মনে হচ্ছে না তা এত সহজভাবে নেওয়া যাবে৷''''
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ওলামা লীগের ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বন্দনা লিখেছেন, ‘‘ওলামা লীগ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে৷ তাদের এই দাবি পূরণ না হলে কাল যে এই ‘ওলামা লীগের' দাবি পূরণ করতে অন্য কেউ চাপাতি তুলে নেবে না তার কোনোই গ্যারান্টি নেই৷ সব সম্ভবের দেশ এই বাংলাদেশ৷ এখানে কাউকে আর বিশ্বাস করা যায় না৷''
তবে বন্দনা মনে করেন ড. জাফর ইকবাল এবং ইমরান এইচ সরকারের কিছু হলে সরকার গণরোষের মুখে পড়বে৷ তাঁর মতে, ‘‘স্যারের কিছু হলে লীগ যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, এই এক ঘটনাতেই লীগ ধ্বংস হবে (মনে করার কিচ্ছু নেই যে স্যারকে খুন করা হলে জনতা অন্যবারের মতন ক'দিন কান্নাকাটি করে চুপ করে যাবে)৷ এবং গণজাগরণ মঞ্চ যত ভাগেই ভাগ হোক না কেন, ইমরান এইচ সরকারের কিছু হলে পাব্লিক ছেড়ে কথা কইবে না৷''
সবশেষে আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে বন্দনা কবীর লিখেছেন, ‘‘...লীগ যদি এখনই ধর্মের গোঁড়া ঘোড়ার মুখে জালি ফিট না করে, সতর্ক না হয়, তো লীগ বিপদে পড়বে অনিবার্যভাবে৷ আর কে না জানে, লীগকে বিপদে ফেলার জন্য অন্য কারুকে প্রয়োজন হয় না, লীগ নিজেই যথেষ্ট৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ