বিশিষ্টজনদের ফোনে হুমকি
১৫ অক্টোবর ২০১৬এর আগে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদসহ বেশ কয়েকজনকে একইভাবে হুমকি দেয়া হয়৷ তবে হুমকিদাতা কখনও নিজেকে আইএস, কখনও আনসারুল্লাহ, কখনও জেএমবি বলে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন৷ এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷
একটি নম্বর থেকে এভাবে বিশিষ্টজনদের হুমকি দেয়ার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মোবাইল ফোনের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে লাভ হল কি? হুমকিদাতাদের যদি ধরাই না যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে টা-কি? এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘‘বায়োমেট্রিকে নিবন্ধিত সিম দিয়ে হুমকি দিলে হুমকিদাতাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলা সম্ভব৷'' তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে তথ্য পেতে কিছু সময় লাগতে পারে৷ কিন্তু এটা যদি মাস্কিং হয়ে থাকে তাহলে তাদের কিছু করার নেই৷ মাস্কিং হলো কম্পিউটারে জেনারেট করা একটি নম্বর৷''
এদিকে হুমকি দেয়া নম্বরটির মালিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে না পেলেও সাংবাদিকরা খুঁজে বের করেছেন৷ মোবাইল ফোনে হুমকিদাতার ফেসবুক প্রোফাইল আইডি থেকে দেখা যাচ্ছে, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক৷ পাশাপাশি ‘সিলেটের ডাক' নামের একটি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার৷ ‘জঙ্গিবাদের বিশ্বায়ন' নামে তার একটি প্রকাশিত গ্রন্থও আছে৷ সিলেটে তিনি হাফেজ হিসেবে বেশ পরিচিত৷
তবে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে আলোচিত সেই ব্যক্তি দাবি করেছেন, নম্বরটি তাঁর হলেও হুমকি পাঠানোর বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই৷ এর আগেও তাকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷ তাঁর নম্বর ব্যবহার করে অন্য কেউ এই কাজটি করেছেন বলে মনে করেন সিলেটের এই বাসিন্দা৷
এদিকে, হুমকি পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ৷ তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য ওই দিন বেলা ১২টা ৪৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘গত রাত একটার দিকে ০১৬২******* নম্বর থেকে পাঠানো এক বার্তা পেলাম৷ এর হুবহু: ‘ডেথ কিপস নো ক্যালেন্ডার, এন্ড আনসারুল্লাহ নোস নো টাইম!'
ডয়চে ভেলেকে এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘পুলিশকে জানিয়েছি৷ তারা বলেছে তদন্ত করবে৷ আমাকে সাবধানে থাকতে বলেছে৷ এসব হুমকিতে আমাদের কর্মসূচি কোনোভাবেই কমবে না, বরং বেগবান হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সারাদেশের মানুষই তো হুমকির মধ্যে আছে৷ এই ধরনের হুমকিকে ভয় পেয়ে গেলে তো আর দেশ স্বাধীন হতো না, মুক্তিযুদ্ধও হতো না৷''
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আনু মুহাম্মদ ও জাফর ইকবাল দম্পতিকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নামে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ আবার ওই একই নম্বর থেকে মঈনুল আহসান সাবেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে আইএস জঙ্গিদের নামে৷ আর অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের কাছে হুমকিদাতা পরিচয় দিয়েছে জেএমবি টু নামে৷
কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবেরকে দেয়া হুমকিতে বলা হয়, ‘‘ওয়েলকাম টু আওয়ার নিউ টপ লিস্ট৷ ইউ উইল বি কিলড টুডে ওর টুমরো৷'' এরপর ওই নম্বর থেকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে হুমকি দেয়া হয়৷ মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা জানিয়ে জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারা৷ জাফর ইকবালের হুমকিতে বলা হয়েছে, ‘‘হাই আনবিলিভার! উয়ি উইল স্ট্রেনগুলেট ইউ সুন৷'' আর স্ত্রীকে দেয়া হুমকিতে বলা হয়েছে, ‘‘ওয়েলকাম টু আওয়ার নিউ টপ লিস্ট! ইওর ব্রিথ মে স্টপ এট এনিটাইম৷ এবিটি৷''
জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার প্রফেসর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক থানায় একটি জিডি করেছেন৷ তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে৷''