বিশ্বকাপ বয়কট করছে জার্মানির অনেক পাব
২১ নভেম্বর ২০২২গত ২৭ বছর ধরে কোলনের পাব লোট্টো প্রায় সব উল্লেখযোগ্য ফুটবল-মুহূর্তের সাক্ষী। এফ সি কোলন গোল দিলেই আনন্দে ফেটে পড়েছে লোট্টো। জার্মানি বিশ্বকাপে খেললে বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলেই ফুটবলপ্রেমীরা ভিড় জমিয়েছেন এখানে। নদীর স্রোতের মতো বয়েছে বিয়ার। বিয়ার মাগে চুমুক দিয়ে ফুটবল দেখার আনন্দে মেতেছেন সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীরা। প্রিয় ক্লাব বা দেশ জিতলে একেবারে অজানা মানুষরা কোলাকুলি করেছেন আনন্দে।
ফুটবল ম্যাচ ঘিরে এই উত্তেজনা, আবেগ, আনন্দের বিস্ফোরণ ও অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের জন্যই বিখ্যাত লোট্টো। অবিশ্বাস্য মনে হলেও লোট্টোতে এবার কাতার বিশ্বকাপ দেখানো হচ্ছে না। ফিফার স্টিকার লাগানো সব বিয়ারের বোতল সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কাতারে বিশ্বকাপের ম্যাচ যখন চলবে, তখন এই বিখ্যাত পাবে কুইজ হবে, আলোচনার আসর বসবে, ডিজিটাল গেমসে ডুবে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু বিশ্বকাপের কোনো জায়গা এবার লোট্টোতে নেই। কারণ, বিশ্বকাপ বয়কট করে লোট্টো প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ফিফার বিরুদ্ধে, কাতারের বিরুদ্ধে। আর এই প্রতিবাদ ভাইরাল হয়েছে।
বয়কটের সিদ্ধান্ত
লোট্টো একা নয়, জার্মানির অনেক পাবই কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে টিভি বা বিশাল স্ক্রিনে বিশ্বকাপ দেখা যাবে না। তার ফলে ব্যবসা মার খেতে পারে। কিন্তু সেই ঝুঁকি নিয়েই বয়কটের সিদ্ধান্তে সামিল হয়েছে তারা।
লোট্টোর এক মালিক পিচার জিমারম্যান ফুটবল বলতে পাগল। এফসি কোলনের সিজন টিকিট আছে তার। ডিডাব্লিউকে জিমারম্যান বলেছেন, ''আমরা একটা উদাহরণ তুলে ধরতে চাই। ফিফা এখন অর্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। আমরা ফিফার দুর্নীতির প্রতিবাদ করছি। কাতারের মানবাধিকার লংঘন, নারীদের দমন, সমকামীদের প্রতি বিভেদ ও অত্যন্ত খারাপ কাজের পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।''
তিনি বলেছেন, ''গত এপ্রিলে আমরা প্রথম বয়কটের ডাক দিই। তখন আমরা সংখ্যালঘু ছিলাম। যত সময় এগিয়েছে, ততই আমরা মানুষের সমর্থন পেয়েছি।''
এখন তো এই প্রতিবাদের ডাক এতটাই ভাইরাল হয়েছে যে, জাপানের একটি টিভি দল কোলনে এসেছে এই প্রতিবাদের ছবি তুলে ধরতে।
জীবনে এই প্রথমবার জিমারম্যান বিশ্বকাপের সূচি জানেন না। বিশ্বকাপের কোনো খবর রাখছেন না।
উৎসাহ কম
জার্মানিতে এবার কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে উৎসাহ কম। ইন্টারস্পোর্টস, স্পোর্টস ২০০০-এর মতো দোকান, যারা এই সময় ঢালাও জার্সি বিক্রি করে, তারা জানিয়েছে, গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার জার্সি ৫০ শতাংশ কম বিক্রি হয়েছে। জার্মানির মানুষ গাড়িতে ফুটবল বা দেশের পতাকার স্টিকারও বেশি লাগাচ্ছেন না।
শীতের সময় বলে খোলা জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা হয়নি। একটি সমীক্ষা বলছে, জার্মানির অর্ধেক মানুষই বিশ্বকাপকে উপেক্ষা করছেন।
লোট্টোর সমালোচনা
তবে সামাজিক মাধ্যমে লোট্টোর সমালোচনাও হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কাতার থেকে আসা গ্যাসে লোট্টো পাব গরম রাখছে, আবার কাতারের সমালোচনা করে বিশ্বকাপের খেলা দেখানো বন্ধ করে দিয়েছে। এটা দু-মুখো নীতি।
তবে এসব কথায় কান দিচ্ছেন না জিমারম্যান। তিনি বলছেন, লোট্টোকে ফিফা-ফ্রি জোন করে তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি জানেন, এর ফলে ব্যবসা কিছুটা হলেও কমবে। তিনি সেই ক্ষতিটা স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত।
শুরু যেখান থেকে
দুই বছর আগে ডিটিশ শুলজ-মামেলিং বয়কটকাতার২০২২ আন্দোলন শুরু করেন। এই নিয়ে তিনি একটি বইও লিখে ফেলেছেন। কেন কাতারে বিশ্বকাপ হওয়া উচিত নয়, বইটা তা নিয়েই লেখা।
তিনি বলেছেন, ''আমি তো সাধারণ মানুষের, ফুটবলপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। রাশিয়ার বিশ্বকাপ নিয়েও প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু তখন মানুষ ভেবেছিলেন, আর যাই হোক রাশিয়া বড় দেশ। তারা বিশ্বকাপের আয়োজন করছে, ঠিক আছে। কিন্তু সাড়ে তিন লাখ মানুষের দেশ কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন করছে, এটা তো অযৌক্তিক ব্যাপার।''
তারা ফিফা ও কাতারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছেন। ফিফার নামাঙ্কিত কোনো জিনস না কেনা, কাতারে না যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু জার্মানি যদি ভালো খেলে তখন কী হবে? অধিকাংশ মানুষ যদি টিভিতে খেলা দেখেন তো কী হবে? ওই প্রতিবাদী মানুষের দাবি, তারা একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছেন, প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন, কিন্তু তারা সব মানুষের খেলা দেখা বন্ধ করতে পারবেন না, সেটা জানেন। তবে মানবাধিকার নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, সেটাই তাদের বড় পাওয়া।
অলিভার পাইপার/জিএইচ