নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের হত্যাকাণ্ড
১৫ জানুয়ারি ২০১৫সংবাদ বাছাইয়ের একটি চিরন্তন নীতি হল, ঘটনা টাটকা হতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, তা কাছে ঘটছে, না দূরে; এবং পাঠকদের কাছে তার গুরুত্ব কতোটা৷ একটি ব্যঙ্গ-পত্রিকার উপর এতো বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি৷ ঘটনাটা ঘটে ইউরোপে, এবং তার গুরুত্ব ছিল এই কারণে যে, যা আক্রান্ত হয়, তা আমাদের কাছে অতীব মূল্যবান: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা৷ সেই কারণে শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ডের কাহিনি সব অন্য খবরকে ছাড়িয়ে সংবাদ জুড়ে থেকেছে৷ কাজেই ইউরোপীয়রা শার্লি এব্দো আক্রমণের প্রায় একই সময়ে সুদূর নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বের দু'টি শহরে বোকো হারামের ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসলীলার কথা শুনলেও, সেদিকে মনোযোগ দিতে পারেনি৷
অথচ বাগা এবং ডোরন বাগা, এই দু'টি শহর ও তার আশপাশের ১৬টি গ্রাম মিলিয়ে মোট দু'হাজার মানুষের নিহত হবার কথাও শোনা গেছে৷ অপরদিকে নাইজেরীয় সেনাবাহিনী বলছে শ'দেড়েক মানুষের নিহত হওয়ার কথা৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংস্থা এবার যে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি প্রকাশ করেছে, তা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রায় চার হাজার ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘যুদ্ধক্ষেত্রের' সর্বত্র লাশ পড়ে থাকার বিবরণ দিয়েছেন৷
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম নিয়মিতভাবে বোকো হারাম, উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় তার একটি শরিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন নৃশংসতার খবর দিয়ে আসছে৷ বোকো হারাম দু'শোর বেশি কিশোরীকে অপহরণ করার পর সারা বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অপরাপর অনুষ্ঠানে ‘‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস'' অভিযান চলে, সেই সঙ্গে ছিল নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা৷ কিন্তু পশ্চিমি সরকারবর্গ দৃশ্যত সংশ্লিষ্ট হতে চাননি৷ বাগা ও ডোরন বাগা-য় শত শত মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবার বিশ্বকে সচেতন করে তুলবে, বলে আশা করা যায়৷ বোকো হারাম নিজে থেকেই অন্তর্হিত হবে, বলে নাইজেরীয় সরকার আর আশা করতে পারেন না – বিশেষ করে বোকো হারাম যখন পাশের কয়েকটি দেশেও সক্রিয়৷
পশ্চিমে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ইত্যাদি দেশে সক্রিয় হবার জন্য সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মানবিকতা সংক্রান্ত যুক্তি দেখিয়েছি৷ প্যারিসের ঘটনার পর আমাদের মতো পশ্চিমি সাংবাদিকদের বোকো হারাম সংক্রান্ত খবরাখবরকে পুনরায় সংবাদসূচির শীর্ষে রাখা উচিত৷ যারা ইসলামের বিকারগ্রস্ত ব্যাখ্যা মেনে নিতে রাজি নয়, এই ইসলামি উগ্রপন্থিরা তাদের সকলকে হত্যা করতে প্রস্তুত৷ অপরদিকে আমাদের মনে রাখা উচিত যে, প্যারিসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সহিংসতার নিন্দা করেছেন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সহিংসতা বর্জন করেছেন৷ আমাদের আজ যা প্রয়োজন, তা হল মানবতার নামে আন্তর্জাতিক অভিযান৷
সংবাদভাষ্য: গ্রেহেম লুকাস/এসি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন