বড় পরিসরে কাজ করবে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’
৩০ জুলাই ২০২৪জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই সবাই মিলে বসে কিভাবে কাজ করা হবে সেটা ঠিক হবে৷ তবে এই ধরনের কমিশনের পক্ষে কী করা সম্ভব? একটা দিন, তারিখ ঠিক করে আমরা হয়ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটোরিয়ামে সবাইকে আসার আহবান জানালাম৷ সেখানে ভিকটিম ছাড়াও তাদের স্বজনরা এসে তাদের বক্তব্য দেবেন৷ সেখানে হয়ত একজন ব্যবসায়ী এসে বললেন, তার দোকান কারা ভেঙেছে, কিভাবে ভেঙেছে৷ সেগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করবো৷ এভাবে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যসহ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তগুলো নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা হবে৷ সরকার যদি কমিশনের কাজে বাধা দেয়, তাহলে কাজের পরিসর হয়ত একটু ছোট হতে পারে, তবে উদ্দেশ্য ঠিক থাকবে৷’’
কোটা আন্দোলন ঘিরে বিপুল প্রাণহানি, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারসহ নানা সহিংস ঘটনায় সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন' গঠন করা হয়েছে৷ গত সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় কমিশনের পক্ষে এই তথ্য জানানো হয়৷ বার্তাটি পাঠিয়েছেন গণতদন্ত কমিশনের যুগ্ম সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা৷
কমিশনের সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী অনীক আর হক, অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা৷ কমিশনের যুগ্ম সভাপতি হবেন বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন ও সুলতানা কামাল৷ আর সদস্যসচিব হিসেবে যৌথভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা৷
এ ছাড়াও এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন সিনিয়র আইনজীবী তোবারক হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন, আইনজীবী ও শিক্ষক ড. শাহদীন মালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ্ খান, শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনজীবী রাশনা ইমাম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার৷
এই কমিশন কীভাবে কাজ করবে, কমিশন তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করবে কীভাবে, এটা কি জাহানারা ইমামের গণআদালতের মতো প্রতীকী, নাকি আরো বড় পরিসরে কাজ করবে- এসব প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা যে প্রতীকী হবে না, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়৷ বৃহৎ পরিসরেই কাজ করবে এই কমিশন৷ তবে কিভাবে কাজ হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, বা বলতে চাচ্ছি না৷ খুব শিগগিরই আমরা সবাই একসঙ্গে বসবো৷ সেখানেই আপনার প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হবে৷ আপাতত আমরা সবার কাছে অডিও, ভিডিও, ফটোগ্রাফ ও লেখাসহ সব ধরনের তথ্য চেয়েছি৷ এই কমিশনের পরিসর আরো বাড়তে পারে৷ সবার মতামত নিয়েই এই কমিশন গঠন করা হয়েছে৷’’
কমিশনের পক্ষে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘‘গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত হয়৷ এই সহিংসতার প্রতিবাদে বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাঈদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়৷ কিন্তু পুলিশ যখন মামলা দায়ের করে, তখন সাধারণ ছাত্র ও জনগণকে দায়ী করা হয়৷ এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং এইসব ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দাবি উঠেছে৷ এ ঘটনায় পত্রিকার হিসাবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারি হিসেবে তা ১৪৭ জন৷’’
কমিশন মনে করে, ‘‘ওই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারসহ নানা সহিংস উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তাতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে৷ তাই এসব ঘটনার কারণ উদঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে৷ এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে৷’’
জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সব সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্য শিগগিরই অনুরোধ জানানো হবে৷