ভারতে চিকিৎসা শিক্ষায় নয়া আইন
৩১ জুলাই ২০১৯দেশে চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে সময়োপযোগী এবং সংস্কারমুখী পাঠ্যসূচি চালু করার কথা বলছে ভারত সরকার৷ এজন্য ১৯৫৬ সালের আইন বিলোপ করতে চাইছে তারা৷
তবে বিরোধীরা বলছে, নতুন আইন চালু হলে ভেঙে পড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷ রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্য ‘বিপজ্জনক' এই আইন৷ শহর ও গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিস্তর বৈষম্য দেখা দেবে৷ পোয়াবারো হবে হাতুড়ে চিকিৎসকের৷ গ্রামে ফিরবে ‘কোয়াক ডাক্তার' !
লোকসভায় পাশ হয়েছে ‘ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল'৷ অপর কক্ষ রাজ্যসভায় পাশ হলেই আইনের রূপ নেবে বিলটি৷
প্রস্তাবিত আইনের বিরোধীতায় দেশজুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসকরা৷ কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন'৷ সংস্থার সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এতদিন মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ছিল নির্বাচিত সংস্থা৷ এই সরকার সার্বভৌমত্বে কুঠারাঘাত করছে৷ নির্বাচনের পরিবর্তে সরকার মনোনীত সদস্যরা এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন! বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ৫০ শতাংশ কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ সেগুলো এবার মোটা অঙ্কে বিক্রি হবে৷ বিলটি গণতন্ত্র-বিরোধী, গরিব-বিরোধী, চিকিৎসক-বিরোধী এবং সাধারণ মানুষ-বিরোধী৷ আন্দোলনে নেমেছেন আট লক্ষ চিকিৎসক৷''
কী কী রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে?
জাতীয় স্তরে ‘ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন' এবং ৩ বছরের মধ্যে রাজ্যস্তরে গঠিত হবে ‘স্টেট মেডিকেল কমিশন'৷ চিকিৎসা শিক্ষা সংস্থা এবং চিকিৎসকদের পেশাগত নিয়ন্ত্রণ নীতি নির্ধারণ করবে কমিশন৷ বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আসনের ফি নির্ধারণ করবে এই কমিশন৷ এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার একটি ‘মেডিকেল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল' গঠন করবে৷ গঠন করা হবে কেকটি ‘স্বয়ংশাসিত বোর্ড'৷ বোর্ডগুলি হল, ‘আন্ডার গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড' এবং ‘পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড'৷ এই বোর্ডগুলি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম, নির্দেশিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ্যতার স্বীকৃতি দেবে৷ এছাড়া গঠন করা হবে ‘মেডিকেল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রেটিং বোর্ড'৷ এই বোর্ডই দেশে নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি, স্নাতকোত্তর কোর্স চালু এবং আসন সংখ্যা বাড়ানোর অনুমোদন দেবে৷ গঠণ করা হবে ‘এথিক্স অ্যান্ড মেডিকেল রেজিস্ট্রেশন বোর্ড'৷ এই বোর্ডের কাজ হবে গোটা দেশের লাইসেন্স প্রাপ্ত সমস্ত রেজিস্টার্ড চিকিসকদের তালিকা তৈরি করা৷ সেইসঙ্গে চিকিৎসকদের পেশাদারি আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ করা৷ এই বোর্ডই কমিউনিটি হেল্থ প্রভাইডারদের একটি রেজিস্টার তৈরি করবে৷
কমিউনিটি হেল্থ প্রভাইডার কারা?
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ‘মডার্ণ মেডিকেল প্রফেশন'-এর সঙ্গে যুক্ত বেশকিছু ‘মিড-লেভেল প্র্যাকটিশনার'দের চিকিৎসা করার লাইসেন্স দেবে এনএমসি৷ এই ‘মিড-লেভেল প্র্যাকটিশনার'-রা প্রাথমিক ও প্রতিষেধক ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবেন৷ যাকে ‘ভয়ানক' বলছেন বিরোধীরা৷
প্রবেশিকা পরীক্ষা- প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য জাতীয় স্তরে অভিন্ন ‘ন্যাশনাল ইলিজিবিলিটি-কাম-এন্ট্রান্স টেস্ট' বা এনইইটি পরীক্ষা দিতে হবে৷ স্নাতক স্তরে পাশ করার পর এমবিবিএস ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা করার লাইসেন্স পেতে হলে পড়ুয়াদের ‘ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট' উত্তীর্ণ হতেই হবে৷ পর পর দু-বার সুযোগ দেওয়া হবে৷ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রবেশিকা হিসেবেও গণ্য হবে এটি৷
লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিলটিকে আসলে সরকারের পাগলামি মনে করি৷ কারণ, সংবিধান ও গণতন্ত্রে সর্বক্ষেত্রে নির্বাচনের মূল্য রয়েছে৷ শহর ও গ্রামের বৈষম্য কেন?''
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, এর আগে সব দলের সাংসদদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি যে সুপারিশ করেছিল তারমধ্যে ৪০টি পূর্ণাঙ্গ ভাবে, সাতটি আংশিক ভাবে মেনে নিয়েছে সরকার৷