ভারতে ‘তিন তালাক' নিষিদ্ধ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এক বছর আগেই মুসলমানদের বিবাহ বিচ্ছেদে ‘তিন তালাক' প্রথা বাতিলের রায় দিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, এই প্রথা কেউ পালনের চেষ্টা করলে তাঁকে শাস্তি প্রদানের কথাও বলেছেন আদালত৷ কিন্তু দেশটির সংসদে আদালতের এই রায়কে আইনি ভিত্তি দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়নি৷ ফলে মোদী সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে আদালতের রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ভারতে বসবাসরত সতের কোটি মুসলমানের অধিকাংশই সুন্নি এবং তারা পারিবারিক বিষয়াদি ও বিরোধ নিষ্পোত্তিতে সাধারণত দেশটিতে প্রচলিত ‘মুসলিম পার্সোনাল ল' ব্যবহার করে থাকেন৷ এই আইনে একজন পুরুষ চাইলে তিন বার ‘তালাক' শব্দটি উচ্চারনের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদকার্যকর করতে পারেন৷ আর এজন্য কোনো সময়সীমা নেই, এমনকি মোবাইল ম্যাসেজ বা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেও এভাবে তালাক দেয়া সম্ভব৷
ভারতের আদালত মনে করে, বিবাহবিচ্ছেদের এই পন্থা মুসলমান নারীর সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি৷ তাই, এই পন্থা বিলুপ্তির পক্ষে রায় দেন আদালত৷ এদিকে, অধ্যাদেশ আকারে ভারত সরকার আগামী ছয় মাসের জন্য আদালতের এই রায় বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছে৷ তবে অধ্যাদেশটিকে চূড়ান্ত আইনি রূপ দিতে এই সময়ের মধ্যে আবারো সেটিকে সংসদে উত্থাপন করতে হবে৷
ভারতের আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ এই বিষয়ে জানান, প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২২টি দেশে ‘তিন তালাক' নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তিনি ভারতেও এটি নিষিদ্ধ করতে বিরোধী দলগুলোর প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ভারতের ‘মুসলিম ল বোর্ড' আদালতে জানিয়েছিল যে, তারা তিন তালাককে একটি ভুল পন্থা মনে করলেও সেটি প্রতিরোধে আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না৷ বরং বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের হাতে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে তারা৷ অবশ্য দেশটির প্রগতিশীল অনেক মুসলমান অ্যাক্টিভিস্ট এক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তকেই সঠিক মনে করছেন৷ উল্লেখ্য, ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষে শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ ফলে নিম্নকক্ষে তিন তালাক নিষিদ্ধের বিষয়টি সহজে অনুমোদন পেলেও দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বাধার মুখে উচ্চকক্ষে তা আটকে যাচ্ছে৷ কংগ্রেস তিন তালাকের চর্চা করার চেষ্টা কেউ করলে তাঁকে তিন বছরের শাস্তি দেয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ দলটি শাস্তির এই মাত্রা কমানোর এবং একটি সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের পক্ষে৷
এআই/এসিবি (এপি, রয়টার্স)