সরকারি শিক্ষা কি উপযুক্ত?
৫ অক্টোবর ২০১৭সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার মান যাচাইয়ের একটা সরকারি উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সেই সুবাদে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ইত্যাদি রাজ্যে শিক্ষকদের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে এবং তার শোচনীয় ফল সামনে আসছে৷ ইংরেজি, ভূগোল, ইত্যাদি বিষয়ে তো বটেই, সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষাতেও অনেক সময় অসাধারণ জ্ঞানের অভাব প্রকট হয়ে পড়ছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷ এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষায়, শিক্ষকদের মানে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বিহার এবং তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ৷ এই রাজ্যের প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার পড়ানোর কোনও প্রশিক্ষণই নেই৷ এবং এই তালিম না পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেশিরভাগই পড়ান বেসরকারি স্কুলে৷ অবশ্য এই রিপোর্ট নেহাতই সরকারি এবং সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ, বিতর্কের অবকাশ আছে৷ তবে মুক্ত বিদ্যালয়ের জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, সম্প্রতি তারা অপ্রশিক্ষিত প্রাইমারি শিক্ষকদের একটি ডিসট্যান্ট লার্নিংয়ের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে৷ স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে গেলে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার এই ডিপ্লোমা থাকা বাধ্যতামূলক করছে সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের ১২ দশমিক ৭ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে এই কোর্সে নাম নথিভুক্ত করতে চেয়ে৷ এর মধ্যে ৯ দশমিক ২৫ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাই বেসরকারি স্কুলের, আর বাকি ৩ দশমিক ৫ লক্ষ সরকারি স্কুলে পড়ান৷
কিন্তু বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক এবং তাঁদের পড়ানোর মান কি এতটাই খারাপ? সত্যিই কি বাস্তব ছবিটা এরকম? এই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কলকাতার এক প্রথম সারির বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা তমালী বসুর কাছে৷ তিনি একেবারে অন্য কথা বললেন৷ তাঁর দাবি, সরকারি প্রশিক্ষণ না পেলেও ভালো বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতিনিয়তই নানা ধরনের কার্যক্রম, কর্মশালার মধ্যে দিয়ে যান, যা তাঁদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করে৷ আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে তাঁরা অনেক বেশি পরিচিত, যা সম্ভবত সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা নন৷ এ কারণে অভিভাবকরা সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি স্কুলের ওপরেই বেশি ভরসা রাখেন, নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যতের প্রশ্নে৷ সেই কারণেই সম্ভবত সরকারি রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে যে, সরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের ড্রপ আউট করা, অর্থাৎ স্কুলছুটের হার বেশি৷ তমালী বসু ডয়চে ভেলেকে বললেন, আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই এগিয়ে আছেন৷
তাহলে সরকারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়ার ফরমান বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা কীভাবে নিচ্ছেন? তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী? তমালী বসু জানালেন, বিশেষ করে বর্ষীয়ান শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্ষুব্ধ৷ কারণ, তাঁদের ক্ষেত্রে অর্জিত দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা৷ যাঁরা কোনও সরকারি প্রশিক্ষণ ছাড়াই বছরের পর বছর অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পড়াচ্ছেন৷ আর তমালী বসুর প্রশ্ন, সরকারি তালিমে যদি ভালো শিক্ষকই তৈরি হবেন, তাহলে যেসব সরকারি স্কুলে তাঁরা পড়ান, সেসব স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট ভালো হয় না কেন?