1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে এশিয়া: আইএমএফ

১৬ এপ্রিল ২০২০

করোনা সংকটে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এশিয়ায় ঐতিহাসিক মন্দার পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মহলের। এ দিকে অ্যামেরিকায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত।

https://p.dw.com/p/3ayhV
ছবি: AFP/A. Weiss

ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে এশিয়া। সতর্কবার্তা জারি করল ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ। তাদের পূর্বাভাস, গত ৬০ বছরে এই প্রথম এশিয়ার অর্থনীতিতে কোনও প্রবৃদ্ধি হবে না। ২০০৮ সালের মন্দার সময়েও এমন ঘটেনি। করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে। বুধবারই আইএমএফ জানিয়েছিল, পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকলে এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি তিন শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়বে।

২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও এশিয়ার বাজার সম্পূর্ণ ধসে পড়েনি। আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান বলছে, সে বছরেও এশিয়ার বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রকোপে ২০২০ সালের অর্থনৈতিক চিত্র আরও ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছে। আইএমএফ-এর আশঙ্কা এ বছর কোনও বৃদ্ধিই দেখতে পাবে না এশিয়ার বাজার। গত ৬০ বছরে যে ঘটনা কখনও ঘটেনি। আইএমএফ-এর এশিয়া এবং প্যাসিফিকের প্রধান এই অঞ্চলের সমস্ত সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে বাজার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনই ভয়াবহ সমস্যায় পড়বেন গরিব মানুষ। প্রতিটি সরকারের কাছে তাঁর আর্জি, গরিবের জন্য আর্থিক প্রণোদনার পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু করা হোক। বিশেষ প্যাকেজ ছাড়া গরিব মানুষকে বাঁচানো মুশকিল বলে সতর্ক করা হয়েছে।

এ দিকে আরও একটি উদ্বেগজনক মাইলস্টোন পার করল করোনা সংকট। বুধবার বিশ্ব জুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। ইউরোপ কিংবা অ্যামেরিকায় যে পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে, এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশ গুলিতে এখনও তেমন পরীক্ষা হচ্ছে না বলেই তাঁদের বক্তব্য। পরীক্ষা হলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তো বলেই তাঁদের ধারণা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার জনের। অ্যামেরিকায় প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। তবে ইউরোপে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা গত কয়েক দিনে অনেকটাই কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই আভাস দিয়েছিল যে, ইউরোপে করোনা সংক্রমণ এখন আয়ত্তের মধ্যে এসেছে।

ট্রাম্পের সমালোচনায় বিল গেটস, চীন ও জাতিসংঘ

পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হোক, একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েই চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থ বন্ধ করেছিলেন। বুধবার তিনি জানিয়েছেন কী ভাবে অ্যামেরিকার জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়, তা নিয়ে বিশদে আলোচনা করবেন। মে মাসের গোড়ায় লকডাউন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। যা নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্নরদের সঙ্গে তাঁর তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দেশের অর্থনীতি এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা ট্রাম্পের। সূত্র জানাচ্ছে, বক্তৃতায় বেশ কিছু গাইডলাইন দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প যাই বলুন, নিউ ইয়র্ক এখন কার্যত মৃত্যুপুরী। হাসপাতালে জায়গা নেই। মর্গ ভরে গিয়েছে মৃতদেহে। এমনকী, মৃতদেহ কবরও দেওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে বুধবার পর্যন্ত শুধু নিউ ইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। পুরো দেশে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিউ ইয়র্কের গভর্নর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছেন। শুক্রবার থেকে এই নিয়ম চালু হবে। মেরিল্যান্ড এবং পেনসিলভেনিয়াতেও একই নির্দেশ জারি হয়েছে।

করোনার এই ভয়াবহ সংকটের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচন সমাপ্ত হলো। এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়লো। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ৬৬ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। গত ২৮ বছরে এটাই সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দেশের মানুষ করোনা সংকটে শাসক দল এবং প্রেসিডেন্টের কাজে খুশি। বুথ ফেরত সমীক্ষায় স্পষ্ট, প্রেসিডেন্ট মুনই ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছেন। ৩৩০ আসনের পার্লামেন্টে শাসক দল পেতে পারে ১৮০ টি আসন। বিরোধীদের জুটতে পারে ১০৩টি আসন। এশিয়ায় চীনের পরে দক্ষিণ কোরিয়াই এখনও পর্যন্ত করোনায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি এলাকায় করোনা রোগীদের জন্য আলাদা বুথ তৈরি করা হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এ দিকে ট্রাম্পের ঘোষণার পরে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তাঁর বক্তব্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে তিনি দুঃখিত। তবে এটা রাজনীতির সময় নয়। পৃথিবীর সমস্ত দেশকে এক সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জার্মানি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আরও বেশি সাহায্যের জন্য তারা প্রস্তুত।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)