মন্দির রাজনীতি, সরগরম রাজ্য
২৬ জুন ২০১৭তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী, মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত বলে পরিচিত ফিরহাদ হাকিম৷ তাঁকে নাকি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থস্থান, প্রাচীন তারকেশ্বর মন্দিরের পরিচালন কমিটির সভাপতি করেছে রাজ্য সরকার! এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক বিতর্ক হওয়ার কথা, হচ্ছেও৷ ধর্মে যিনি মুসলিম, তিনি কী করে একটি হিন্দু মন্দিরের দায়িত্বে থাকবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, কটাক্ষে৷
জনপ্রিয় অভিনেত্রী, এখন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গাঙ্গুলি টুইট করেছিলেন — ‘মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রাচীন তারকেশ্বর মন্দিরের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন৷ হিন্দুধর্মে আস্থা রেখেছেন!'
এই টুইটে রূপা ট্যাগ করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে৷ যদিও রূপার কটাক্ষের প্রকৃত অর্থ বুঝতে না পেরে অনেকেই বিরুদ্ধ মন্তব্য করে টুইট করেন৷ তার জবাবে রূপাকে বলতে হয়, আবার পড়ুন, কী বলতে চেয়েছি বুঝুন৷ ততক্ষণে টুইটার, ফেসবুক সরগরম পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্যে৷ প্রাক্তন সাংবাদিক, এখন সক্রিয় বিজেপি প্রবক্তা রন্তিদেব সেনগুপ্ত তাঁর ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘ফিরহাদ হাকিম তারকেশ্বরের দায়িত্বে৷ এবার কি মুখ্যমন্ত্রী কোনো হিন্দুকে ফুরফুরা শরিফের মাথায় বসাবেন?' সেই নিয়েও বিতর্ক ছড়ায়৷
দল হিসেবে বিজেপি ঠিক কী বলছে এই নিয়োগ সম্পর্কে? পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানালেন, এটা একেবারেই মমতা ব্যানার্জির বিভেদমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতির নমুনা৷ এটা তাঁর সাম্প্রদায়িক তোষণের আরেক উদাহরণ৷ এক মুসলিম নেতাকে একটি হিন্দু মন্দিরের কর্তৃত্ব দিয়ে তিনি এক বিশেষ সম্প্রদায়কে বার্তা দিতে চাইছেন, যে তিনি তাঁদের পক্ষেই রয়েছেন৷
আর তারকেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ এই সরকারি নিয়োগকে কীভাবে নিচ্ছে? মন্দিরের দায়িত্বে যে অছি পরিষদ আছে, তারা কি আদৌ মেনে নিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত? মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বিষয়টা পরিষ্কার হলো এবং ফাঁকিটা ধরা পড়ল৷ ওঁরা পরিষ্কারই জানালেন, ফিরহাদ হাকিম যে কমিটির সভাপতি হয়েছেন, সেটি তারকেশ্বর এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গঠিত একটি সরকারি কমিটি৷
এই খাতে সরকার কিছু টাকা বরাদ্দ করেছে৷ সেই টাকায় যে উন্নয়নমূলক কাজ হবে, তার তদারকি করবেন ফিরহাদ হাকিম৷ এর সঙ্গে তারকেশ্বর শিবমন্দিরের কোনো সম্পর্ক নেই৷ ওঁরা জানালেন, এটি পুরোপুরিই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, যার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন হুগলির জেলাশাসক৷ মন্দির কমিটি সেই বিজ্ঞপ্তির কোনো প্রতিলিপিও পাননি, কারণ পাওয়ার কথাও নয়৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাসনিক আধিকারিক উল্টে বললেন, সরকারি টাকায় যদি তারকেশ্বর মন্দির এবং সংলগ্ন চত্বর, জলাশয়ের কোনো উন্নতি হয়, তাতে তো ভালোই হয়, খারাপ কিছু হয় না৷ বরং বিজেপিই এই বিষয়টা নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করছে!
আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷