তিস্তার পানি লুকিয়েছেন মমতা
১০ এপ্রিল ২০১৭তিস্তার পানি না পওয়ায় চেয়ে এখন বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ‘তিস্তায় তো পানি নাই' – এ কথা বলার পর হাসিনাকে তোরসা আর দুধকুমারের পানি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দেন তিনি৷
তিস্তা নদীর উৎপত্তি সিকিমে৷ আর এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লালমনিরহাট জেলার সীমান্ত দিয়ে৷ মাঝখানে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মূল লক্ষ্য ছিল তিস্তার পানিবণ্টণ চুক্তি৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছাও ছিল৷ কিন্তু বেঁকে বসেন মমতা ব্যানার্জি৷ প্রসঙ্গত, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারের অনুমমোদন ছাড়া কেন্দ্র এ ধরনের রাজ্য সংক্রান্ত চুক্তি করতে পারে না৷ এর আগে ২০১১ সালেও সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও মমতার কারণেই চুক্তিটি আলোর মুখ দেখেনি৷ ঐ সময় মমতা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখতে বললেও, এবার কিন্তু আর বিশ্বাসের কথা বলেননি৷ ৭ এপ্রিল শেখ হাসিনার ভারত সফরের শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি বলেই দেন ‘‘তিস্তায় তো পানি নাই''৷
মমতার এই কথাকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের পানি ও নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইমামুল হক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গজলডোবা এলাকায় বাধ ও ড্যাম দিয়ে তিস্তার পনি প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ তাছাড়া তিস্তার পানি দিয়েই সেখানে কৃষিকাজ হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ আর সেখান থেকে পানি নেওয়া হচ্ছে গঙ্গায়৷ মমতা আসলে তথ্য গোপন করে তিস্তার পানি লুকিয়ে রেখেছেন৷''
রিভারাইন পিপল-এর মহাসচিব শেখ রোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিকিমে ড্যামের কারণে কিছু পানি বাস্পিভূত হয়ে হয়ত কমতে পারে, কিন্তু তিস্তায় পানি নেই – এটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এই যুগে কিছু গোপন করা যায় না৷ কারণ গুগল বা স্যাটেলাইট ইমেজে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷ তিস্তার পানি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যে সেচ প্রকল্পসহ আরো অনেক প্রকল্প চলছে – সেটাও স্পষ্ট দেখা যায়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তিস্তার পানি কমে গেলেও অভিন্ন নদী হিসেবে এর যতটুকু হিস্যা তা তো বাংলাদেশ পাবে৷ তিস্তার পানি দেবো না, এটা বলার অধিকার মমতার নেই৷''
অন্যদিকে ভারত সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা ব্যানার্জি৷ বেঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিস্তার পানি নয়, তোরসা ও জলঢাকার পানি নিয়ে ভাবা হতে পারে৷ ঐ দু'টি নদীর পানি আন্তঃনদী সংযোগের মাধ্যমে দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দেন মমতা৷
বাংলাদেশে তোরসা, দুধকুমার এবং জলঢাকা ধরলা নামে পরিচিত৷ এই দু'টি নদী বাংলাদেশে কুঁড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যমুনায় পড়েছে৷
প্রকৌশলী ইমামুল হক হক বলেন, ‘‘এক অববাহিকার পানি আরেক অববাহিকায় নেওয়া বাস্তব সম্মত নয়৷ এমনিতেই তিস্তার কারণে পরিবশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ এখন ওটা করা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ তাছাড়া মমতা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ভারতই অনুমোদন করবে না৷ কারণ এটা তাদের পরিবেশেরও ক্ষতি করবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ঐ দু'টি নদী তো আলাদা নদী৷ তারা কোনোমতেই তিস্তার বিকল্প নয়৷''
শেখ রোকন আরো বলেন, ‘‘তোরসা এবং জলঢাকা বাম প্রবাহী নদী৷ অন্যদিকে তিস্তা ডানদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ তাই এই দুই নদীর পানি তিস্তায় নেওয়া কারিগরিভাবে অসম্ভব বলেই আমার মনে হয়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘তারপরও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় যে সাতটি নদীর কথা আছে, তার মধ্যে তোরসা আর জলঢাকা রয়েছে৷ তাই ওই দুই নদী আলাদা৷ তিস্তার পানির হিসাবের সাথে তা মেলানো যাবে না৷''
এদিকে এ সব নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়ও হতাশা ফুটে উঠেছে৷ তিনি ভারত সফরের শেষ দিনে সোমবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বৃক্ততায় অনেকটা তির্যকভাবেই বলেন, ‘‘চাইলাম পানি, পেলাম বিদ্যুৎ৷ তবে ভালোই হয়েছে, কিছু তো পেয়েছি৷''