1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিস্তার পানি লুকিয়েছেন মমতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ এপ্রিল ২০১৭

তিস্তার পানি না পওয়ায় চেয়ে এখন বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ‘তিস্তায় তো পানি নাই' – এ কথা বলার পর হাসিনাকে তোরসা আর দুধকুমারের পানি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2azjw
Indien Bangladeschs Premierministerin Sheikh Hasina besucht Narendra Modi
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

তিস্তার পানি না পওয়ায় চেয়ে এখন বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ‘তিস্তায় তো পানি নাই' – এ কথা বলার পর হাসিনাকে তোরসা আর দুধকুমারের পানি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দেন তিনি৷

তিস্তা নদীর উৎপত্তি সিকিমে৷ আর এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লালমনিরহাট জেলার সীমান্ত দিয়ে৷ মাঝখানে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মূল লক্ষ্য ছিল তিস্তার পানিবণ্টণ চুক্তি৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছাও ছিল৷ কিন্তু বেঁকে বসেন মমতা ব্যানার্জি৷ প্রসঙ্গত, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারের অনুমমোদন ছাড়া কেন্দ্র এ ধরনের রাজ্য সংক্রান্ত চুক্তি করতে পারে না৷ এর আগে ২০১১ সালেও সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও মমতার কারণেই চুক্তিটি আলোর মুখ দেখেনি৷ ঐ সময় মমতা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখতে বললেও, এবার কিন্তু আর বিশ্বাসের কথা বলেননি৷ ৭ এপ্রিল শেখ হাসিনার ভারত সফরের শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি বলেই দেন ‘‘তিস্তায় তো পানি নাই''৷

ইমামুল হক

মমতার এই কথাকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের পানি ও নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইমামুল হক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গজলডোবা এলাকায় বাধ ও ড্যাম দিয়ে তিস্তার পনি প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ তাছাড়া তিস্তার পানি দিয়েই সেখানে কৃষিকাজ হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ আর সেখান থেকে পানি নেওয়া হচ্ছে গঙ্গায়৷ মমতা আসলে তথ্য গোপন করে তিস্তার পানি লুকিয়ে রেখেছেন৷''

রিভারাইন পিপল-এর মহাসচিব শেখ রোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিকিমে ড্যামের কারণে কিছু পানি বাস্পিভূত হয়ে হয়ত কমতে পারে, কিন্তু তিস্তায় পানি নেই – এটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এই যুগে কিছু গোপন করা যায় না৷ কারণ গুগল বা স্যাটেলাইট ইমেজে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷ তিস্তার পানি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যে সেচ প্রকল্পসহ আরো অনেক প্রকল্প চলছে – সেটাও স্পষ্ট দেখা যায়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তিস্তার পানি কমে গেলেও অভিন্ন নদী হিসেবে এর যতটুকু হিস্যা তা তো বাংলাদেশ পাবে৷ তিস্তার পানি দেবো না, এটা বলার অধিকার মমতার নেই৷''

অন্যদিকে ভারত সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা ব্যানার্জি৷ বেঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিস্তার পানি নয়, তোরসা ও জলঢাকার পানি নিয়ে ভাবা হতে পারে৷ ঐ দু'টি নদীর পানি আন্তঃনদী সংযোগের মাধ্যমে দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দেন মমতা৷

শেখ রোকন

বাংলাদেশে তোরসা, দুধকুমার এবং জলঢাকা ধরলা নামে পরিচিত৷ এই দু'টি নদী বাংলাদেশে কুঁড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যমুনায় পড়েছে৷

প্রকৌশলী ইমামুল হক হক বলেন, ‘‘এক অববাহিকার পানি আরেক অববাহিকায় নেওয়া বাস্তব সম্মত নয়৷ এমনিতেই তিস্তার কারণে পরিবশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ এখন ওটা করা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ তাছাড়া মমতা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ভারতই অনুমোদন করবে না৷ কারণ এটা তাদের পরিবেশেরও ক্ষতি করবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঐ দু'টি নদী তো আলাদা নদী৷ তারা কোনোমতেই তিস্তার বিকল্প নয়৷''

শেখ রোকন আরো বলেন, ‘‘তোরসা এবং জলঢাকা বাম প্রবাহী নদী৷ অন্যদিকে তিস্তা ডানদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ তাই এই দুই নদীর পানি তিস্তায় নেওয়া কারিগরিভাবে অসম্ভব বলেই আমার মনে হয়৷''

তাঁর কথায়, ‘‘তারপরও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় যে সাতটি নদীর কথা আছে, তার মধ্যে তোরসা আর জলঢাকা রয়েছে৷ তাই ওই দুই নদী আলাদা৷ তিস্তার পানির হিসাবের সাথে তা মেলানো যাবে না৷''

এদিকে এ সব নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়ও হতাশা ফুটে উঠেছে৷ তিনি ভারত সফরের শেষ দিনে সোমবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া  বৃক্ততায় অনেকটা তির্যকভাবেই বলেন, ‘‘চাইলাম পানি, পেলাম বিদ্যুৎ৷ তবে ভালোই হয়েছে, কিছু তো পেয়েছি৷''

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য