মরু-রাজ্যের নির্বাচন
২৪ এপ্রিল ২০১৯দিল্লির মসনদ কার দখলে, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা ভারত জুড়ে৷ গাঁ-গঞ্জে, হাটে-বাজারে সবাই ব্যস্ত দাঁড়িপাল্লায় যুযুধান বিজেপি ও কংগ্রেসের ওজন মাপতে৷ এবার সাধারণ নির্বাচনে কৃষি সমস্যা ও বেকারত্বের ইস্যু যেমন আছে তেমনই হিন্দু-মুসলিম, দেশপ্রেমেই ইস্যুও রয়েছে৷ সাধারণের হিসেব বলছে, এবার বিজেপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রাজ্য গুলিতে সবচেয়ে বেশি ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে৷ এরমধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ইত্যাদি৷ ডয়চে ভেলে ঘুরে দেখল মরু-রাজ্য রাজস্থানের বিভিন্ন শহরের অলিগলি৷
রাজস্থানের উদয়পুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সিসারমা গ্রাম৷ তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের দেবীলাল অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরি করে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে দিন গুজরান করেন৷ তিনি জানালেন, গতবার (২০১৪ সাল) তিনি নরেন্দ্র মোদীর ঝড়ে ভেসে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন৷ এবার কী করবেন? জানতে চাইতেই অকপটে জানিয়ে দিলেন, ‘‘এবার কংগ্রেসের হাত চিহ্নে৷ কারণ মোদী ভাষণ দেওয়া ছাড়া কোনও কাজ করেননি৷''
রাজস্থানে গতবার ২৫টি আসনের সবকটিতেই জিতেছিল বিজেপি৷ এবার কী হবে? শোনা যাচ্ছে, রাজস্থানে ২৫-এ ২৫ আর জুটবে না বিজেপির ভাগ্যে৷ খেলা শেষ হতে পারে ১৩-১২তে৷ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গণিত বলছে, তারা এবার পেতে পারে ১২টি৷ বিজেপি ১৩টি আসন৷ আবার রাজ্যের জুয়াড়িরা বিজেপিকে এগিয়ে রাখছে৷ ১৫-১০-এর হিসেবে মোটা টাকার জুয়া চলছে৷ সে যাই হোক, মোটের ওপর বোঝা গেল, পাঁচ বছর আগের ‘মোদী লহর' আর নেই৷ তবে তা শূন্যও হয়ে যায়নি৷ বিজেপি সরকারের বিগত পাঁচ বছরের সাফল্যের থেকে অনেক বেশি করে তুলে ধরছে নরেন্দ্র মোদীকে৷ স্বভাবতই মোদীর সযত্নে গড়েতোলা ভাবমূর্তিতে ভর করে এবারও নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে শাসক দল৷
উলটোদিকে, মোদী সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কৃষি সমস্যাকে সামনে রেখে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কী কী করবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী৷
রাজস্থানে জাত-পাতের হিসেবে ভোট হয় আজও৷ পাহাড়ের কোল ঘেঁষা গাঁ লাখাবলি৷ মুদির দোকান চালান মোতিলাল প্রজাপত৷ প্রজাপতরা পেশায় কুমোর৷ তাতে পেট ভরে না৷ তাই চাষাবাদ ও দিনমজুরিই ভরসা৷ মোড়ল গোছের মানুষ৷
এই রাজ্যে গো-রক্ষার নামে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের পিটিয়ে খুন করার ঘটনা ঘটেছে৷ সেই প্রসঙ্গ তুলতেই মোতিলাল বলতে শুরু করলেন, ‘‘নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর কাজ করেন রাজনীতিকরা৷ এছাড়া দুই ধর্মের মাতব্বররা হিংসা ছড়ানোর মতো ভাষণ দেন৷ আমরা হিন্দু-মুসলিম গ্রামে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করি৷''
আর এক শহর যোধপুর যাওয়ার পথে সিসোরমা গ্রামে পেয়ারা বাগান পরিচর্যা করছিলেন বাগানের মালিক নারায়নলাল ও তাঁর ছেলে হিতেশ নাগদা৷ বহুযুগ আগে বসবাসের জন্য এই গ্রামটি ব্রাহ্মণদের উপহার দিয়েছিলেন মহারাণা উদয় সিং৷ তিন বিঘা পেয়ারা বাগানের মালিক সপরিবারে কট্টর বিজেপি সমর্থক৷
কয়েক মাস আগে রাজ্যের পরাজিত মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার নাম শুনেই ক্ষেপে উঠলেন হিতেশ৷ তবে মোদীর নামে বেশ নরম ওঁরা৷ হিতেশের কথায়, ‘‘মোদীকে আরও পাঁচটা বছর সময় দেওয়া উচিত৷'' তাঁর দাবি, ‘‘কৃষিতে আর লাভ নেই৷ শিক্ষিতরা চাষাবাদের পাশাপশি অন্য কাজ খুঁজে নিচ্ছেন৷ শুধু চাষের ভরসায় থাকলে অর্ধাহারে, অনাহারে বেঁচে থাকা ছাড়া উপায় নেই৷''
রাজ্যে রাজনৈতিক হাওয়া আর আগের মতোও শুধুই বিজেপিমুখি নেই৷ তপসিলি জাতি ও উপজাতি ভোটারের প্রাধান্য রয়েছে রাজ্যে৷ গত পাঁচ বছরে বিজেপি সরকারের নোটবন্দি, জিএসটি ইত্যাদি পদক্ষেপের নিন্দায় সরব মহম্মদ হানিফ৷
তাঁর মতে, কালোটাকা ও দুর্নীতি রোধের নামে গরিবের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন মোদী৷ ধনীর গায়ে আঁচ লাগেনি পর্যন্ত৷ ওদিকে, রাহুল গান্ধীর ইশতেহারে ‘ন্যায়' যোজনার নাম শুনেছেন৷ বিস্তারিত জানেন না তিনি৷রাজস্থানে ভোটের লড়াই বিজেপি বনাম কংগ্রেসের৷ কয়েক মাস আগেই রাজ্যে বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার রাজ্য সরকারকে উপড়ে ফেলেছে এখানকার জনতা৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, ‘এইট পিএম, নো সিএম৷' বিজেপি মনে করছে, বসুন্ধরার ওপর রাগ ঝেড়ে ফেলে ভোটার অনেকটাই হাল্কা হয়েছে৷ তাই এবার সাধারণ নির্বাচনে কেন্দ্রে সরকার গঠনে মোদীকেই এগিয়ে রাখবে রাজস্থান৷ যদিও মরুভূমের তপ্ত মাটির বাসিন্দারা বলছে, ক্রমশ জমি হারাচ্ছে বিজেপি৷
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷