1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানুষ যেখানে নিপীড়িত, সেখানেই যেতে হবে’

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জুলাই ২০২২

দুর্নীতি রুখতে, সংখ্যালঘুদের নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে, কিংবা শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একের পর এক মামলায় লড়ে চলেছেন বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

https://p.dw.com/p/4EhZ0
বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।ছবি: Srijit Roy

৭০ বছর বয়সেও সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরাজনীতিতে সদা সক্রিয়। রাজ্যে পরিষদীয় সচিবের পদ বিলোপ থেকে শুরু করে সিএএ-এনআরসি পর্যন্ত অনেক জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলায়  লড়েছেন তিনি। কলকাতার সাবেক মেয়র এক সময় ত্রিপুরার অ্যাডভোকেট জেনারেলের দায়িত্বও সামলেছেন। ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চলমান বর্তমান ও সুদূর অতীতের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি৷

ডয়চে ভেলে: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। মাঝপথে আবার গতি শ্লথ হয়ে যাবে না তো?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য: আমাদের দেশে বিচার প্রলম্বিত প্রক্রিয়া। তার বিশদ কারণে আমি যাচ্ছি না। তবে এসএসসি মামলায় তদন্ত দ্রুত এগোনোর নেপথ্যে রয়েছে বিচারপতিদের তৎপরতা। শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিহলে সমাজ পিছিয়ে পড়বে। এই দার্শনিক তত্ত্বের সঙ্গে আমরা আইনি ব্যাখ্যা পেশ করায় বিচারপতিরা কড়া হাতে বিষয়টিকে ধরেছেন। তদন্ত এই গতিতে চললে নিয়োগ দুর্নীতিতে যে বিশাল একটি চক্র কাজ করেছে, তা দ্রুত সামনে আসবে।

সারদা, নারদ কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তদন্ত গতি হারিয়েছে। কেন এই মামলাগুলির ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা গেল না?

সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারির তদন্তে নিযুক্ত সংস্থাগুলি ঠিকঠাক তদন্ত করছিল না। বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনি। সারদা মামলায় আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। সেটি হলো, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে যারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তাদেরও খুঁজে বার করতে হবে। এটা সর্বোচ্চ আদালতের অনন্য নির্দেশ। তবু আমরা দেখেছি, কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে ঢিলেমি করছে। রাজ্যের শাসক দলের নেতারা সরাসরি এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। আমার মতে, মুখ্যমন্ত্রীও যুক্ত। এই নেতাদের বাঁচাতে এখানকার শাসকরা কেন্দ্রের সঙ্গে আঁতাত করে তদন্ত পিছিয়ে দিতে চাইছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এসএসসি মামলার ক্ষেত্রে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চেয়েছি। এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। আমরা আশা করি, সারদা ও নারদ তদন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে অনেক অপরাধী ধরা পড়বে।

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হলে সমাজ পিছিয়ে পড়বে

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে তদন্ত কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্ন শাসক দল তুলছে। আপনি কী ব্যাখ্যা দেবেন?

তদন্তকারী সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করলে এটাই হবে। নারদ টেপে যাকে টাকা নিতে দেখা গেল, তিনি দলবদল করায় তদন্ত আটকে যাচ্ছে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত যারা নেন, তাঁরা অসৎ। আইনের চোখে সকলে সমান। অন্যায় করলে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, এটা বিচার্য নয়।

রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সংস্থা গড়তে হলে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন?

তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েন। এটা ব্যক্তিবিশেষের ত্রুটি। এ ছাড়া তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে স্বয়ংশাসিত করে তুলতে হবে। সরকারের কাছে নয়, আইনসভার কাছে আধিকারিকরা দায়বদ্ধ থাকবেন। অর্থাৎ, কাজকর্মের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে সংসদ বা বিধানসভার জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা রাখা দরকার।

বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হতে থাকলে মানুষের ভরসা কি আর থাকবে?

বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় এই ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা তো নষ্ট হবেই। এর ফলে তৈরি হবে নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যের জন্য দায়ী হবে প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। দেখা যায়, অন্যায়ভাবে কাউকে দিনের পর দিন বন্দি রাখা হচ্ছে। আবার সঠিক কারণে কেউ গ্রেপ্তার হলে হইচই হয়। প্রশাসন বা বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট মানুষজনকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।

আইন কি এর প্রতিকার করতে পারে না?

আইন সবটা পারে না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি অসৎ রাজনীতিকদের ভোট না দিই, তা হলেই হয়। যদিও নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করা হয়। তবুও সমষ্টিগতভাবে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে।

নিয়োগ মামলা নিয়ে এখন রাজনীতি সরগরম। সেই কথায় ফিরি। মোট কতগুলি মামলা, কত টাকার দুর্নীতি?

নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়টি মামলা হয়েছে, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে মেধার ভিত্তিতে যেখানে নিয়োগ হওয়া দরকার, সেই নিয়োগের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের আদালতে আসতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক ত্রুটি। এই ত্রুটি অতিক্রম করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত তো হচ্ছে। কিন্তু স্কুলে নিয়োগের কী হবে?

আইনের মাধ্যমে নিয়োগ সম্ভব। সম্প্রতি মন্ত্রীর কন্যাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে মামলাকারীকে আদালত নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছে। তবে এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা থাকায় দেরি হয়।

কলকাতায় পথের ধারে ৫০০ দিন ধরে অবস্থান করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার হয়ে গেলে তাদের কী হবে?

বয়সসীমা পার হয়ে গেলে চাকরি দেওয়া যাবে কিনা, সেটা বলা মুশকিল। ক্ষতিপূরণের কথা ভাবা যেতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে যেহেতু দীর্ঘদিন মামলা চলছে, তাই বয়সসীমার বিষয়টা রায় দেওয়ার সময় বিচারপতিরা বিবেচনা করবেন বলে মনে হয়।

জনস্বার্থের অনেক মামলা আপনি লড়েছেন। মনে পড়ার মতো উল্লেখযোগ্য মামলা কোনগুলি যদি বলেন...

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিষদীয় সচিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে না পারলে অন্য উপায়ে পদের ব্যবস্থা করা। এর বিরুদ্ধে মামলা করায় আদালত একে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছে। মুখ্যমন্ত্রী কর্মরত এক চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেছিলেন। তিনি মামলা করে বকেয়া প্রাপ্য পেয়ে গেছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সরকারি তহবিল থেকে প্রাপ্য টাকা মেটানো হয়। যারা কুকর্ম করছেন, তাদের পকেট থেকে টাকা দিতে হলে এ ধরনের কাজ কমে যেতো বলে আমার ধারণা।

আপনি তো এখন দেউচা পাচামি নিয়ে ব্যস্ত…

শুধু দেউচা পাচামি নয়, সোমবার মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা গিয়েছিলাম। সেখানে আদানিরা গরিব মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের ফলের বাগান দখল করছে। মানুষ যেখানে নিপীড়িত, সেখানেই যেতে হবে।

বামেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এ রাজ্যে তলানিতে ঠেকেছে। অনেকে বলছেন, আপনি আইনি লড়াইয়ে বামেদের টিকিয়ে রেখেছেন!

সাম্প্রতিক কালে বামেরা দুর্বল হয়েছে এটা অস্বীকার করা যায় না। প্রশাসনিক চাপ ও গুন্ডামিতে বামপন্থিদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। ফারাক্কাতে বামপন্থিদের নাম উচ্চারণ করা যেতো না একটা সময়। এখন সেখানে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছেন। একই জিনিস দেখছি দেউচায়। অর্থাৎ, ভয় কেটে যাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, আপনার জন্য ১৭ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ আটকে গিয়েছে। আপনার প্রতিক্রিয়া?

মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম মেনে নিয়োগ করলে আমি আটকানোর কে? আমি বেআইনি নিয়োগ আটকানোর চেষ্টা করেছি। আসলে মুখ্যমন্ত্রী চান দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে নিয়োগ হোক, আদালত সেটায় বাধা দিচ্ছে।