‘আমি এর্দোয়ানের কাছে মাথানত করবো না'
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭জার্মানির সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র আট দিন৷ এসপিডি নেতা এবং চ্যান্সেলর প্রার্থী মার্টিন শুলৎস আবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের কঠোর সমালোচনা করলেন৷ ফ্রাইবুর্গে নির্বাচনি প্রচারণার মাঝপথে ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল এবং উপস্থাপক জাফর আব্দুল করিমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তুরস্কের মানবাধিকার পরিস্থিতি বেশ খারাপ: আগামীকালই যদি আপনি তুরস্ক যান এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না যে ওরা আপনাকে জেলে ভরবে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তুরস্কে এর্দোয়ান যা করছেন, তাতে চুপ করে বসে থাকা যায় না৷ শরণার্থী ইস্যুতে তিনি গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছেন৷ তাঁর এই আচরণের কারণে কখনোই তুরস্ক ইইউ-এর সদস্যপদ পেতে পারে না৷ এর কারণে যদি তাদের সঙ্গে জার্মানিকে শরণার্থী চুক্তি ভঙ্গ করতে হয়, তবে তাই করতে হবে৷ আমি যতদূর তাঁকে চিনি, শরণার্থী ইস্যুতে কিছুতেই তাঁকে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দিতে পারি না৷''
শুলৎস এর আগেও বেশ কয়েকবার তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ শরণার্থী ইস্যুতে তুরস্কের সাথে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধের পক্ষে শুলৎস৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি এর্দোয়ানের কাছে কখনোই মাথা নত করবো না৷''
ইউরোপীয় অভিবাসন অধিকারের জন্য
শুলৎস বলেন, ‘‘শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেছিলেন, ‘আমরা পারবো৷' কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যদের কাজটা করতে হয়েছিল৷ তাই আমি চ্যান্সেলর নির্বাচিত হলে যাঁরা শরণার্থীদের সমর্থন করেন না, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সেই দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবো৷'' জানান শুলৎস৷ শুধু তাই নয়, খোলাখুলি হাঙ্গেরিকে হুমকি দেন এই চ্যান্সেলর প্রার্থী৷ বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট থেকে তাদের ছেটে ফেলতে৷
তাঁর কথায়, ‘সংহতি একটি নীতি: একদিকে তহবিল সংগ্রহ এবং অন্যদিকে, শরণার্থীদের স্বাগত জানানো৷' আগামী সাত বছরে এতে ৯০০ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ এছাড়া শুলৎস একটি অভিবাসন আইনের প্রস্তাব করে বলেন, ঐ আইনে শরণার্থীদের নির্দিষ্ট কোটা থাকবে, যা নিশ্চিত করে দেবে ইউরোপে ঠিক কত সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশ করবে বা ইউরোপ কত শরণার্থী নেবে৷ তবে অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় আইনে হাত দেয়া যাবে না বলে জানান তিনি৷ এছাড়া আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সেখান থেকে ইউরোপে শরণার্থীদের আসা ঠেকানো যেতে পারে বলেও মন্তব করেন এসপিডি দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানো এই চ্যান্সেলর প্রার্থী৷ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সহযোগিতাই এই সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম বলে মত তাঁর৷
ম্যার্কেলকে আক্রমণ
নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে এখনও অনেকগুলোজরিপে শুলৎসবর্তমান চ্যান্সেলর এবং সিডিইউ দল থেকে অনেকটা পিছিয়ে৷ কিন্তু এরপরও তিনি হাল ছাড়তে চান না৷ এবং যথারীতি ম্যার্কেলকে আক্রমণ করেন৷ বলেন, ‘‘আঙ্গেলা ম্যার্কেল বার বার একটি আদর্শের কথা বলেন৷ বলেন, জার্মানি এমন একটি দেশ, যেখানে আমরা আনন্দের সঙ্গে ভালোভাবে বেঁচে আছি৷'' কিন্তু আগামীতেও তো আমরা ভালোভাবে বাঁচতে চাই৷ আমাদের দেশে কি কোনো সমস্যা নেই? তিনি কি দেখছেন না দেশের মানুষ কী বলছে? তাঁদের প্রশ্ন ‘আমাদের দেশটা কোন পথে হাঁটছে?'
বিশ্ব রাজনীতিতে যে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ব্রেক্সিট সমর্থকদের দেখুন, ইটালির লিগ নর্থ বা গ্রিলো মানুষদের দিকে তাকান৷ তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে৷ এই ক্ষোভ এসেছে বাস্তবে যা ঘটছে সেটার সাথে নিজেদের মতের বিরোধ হওয়ায়৷''
জরিপ কী বলছে?
সর্বশেষ জরিপে যা দেখা যাচ্ছে তাতে তিনি হতাশ কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুলৎস বলেন, ‘‘আমি এটা নিয়ে সত্যিই চিন্তিত নই ৷ আমি যদি আপনাদের হতাশ করে থাকি সেজন্য দুঃখিত৷ তবে জরিপে যা দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমার মন বলছে, ২৪ সেপ্টেম্বর এই জরিপের জবাব দেবে৷ জনগণ তাঁদের মতামত জানাবে ব্যালটের মাধ্যমে৷ তারপর দেখা যাক কী হয়!''
অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে সেরা রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনার কাকে পছন্দ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশি সময় নেননি শুলৎস৷ তিনি বেছে নিয়েছেন গ্রিন পার্টি বা সবুজ দলের প্রধান চেম ও্যজদেমিরকে ‘‘আমি জানি, তিনিই সেরা। তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আমার সঙ্গে ছিলেন৷ তিনি আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তি৷''
ইয়েন্স থুরাও/এপিবি
দেবারতি গুহ
জার্মান নির্বাচন নিয়ে এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী মার্টিন শুলৎসের কাছে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷