মোদী-নওয়াজ শরিফ বৈঠক
২৮ মে ২০১৪
প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী তাঁর কাজের প্রথমদিনে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি ঝালিয়ে নিয়ে৷ সেই লক্ষ্যে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সার্ক দেশগুলির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের অবস্থান নিয়ে আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগান৷ বলা যায়, স্রেফ কূটনৈতিক সৌজন্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং কূটনৈতিক সংযোগের মাধ্যমে পরস্পরকে নতুন করে জানা ও বোঝা৷ সেদিক থেকে সকলের চোখ ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের দিকে, যা নিয়ে প্রথম দিকে একটা ধোঁয়াশা ছিল যে নওয়াজ শরিফ দিল্লি আসবেন কিনা৷ কিন্তু তিনি শুধু একা আসেননি৷ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন উচ্চস্তরের এক প্রতিনিধিদল৷ নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ মিনিট, কিন্তু চলে ৫০ মিনিট ধরে৷
বৈঠক শেষে নওয়াজ শরিফ মোদীর সঙ্গে আলোচনাকে অত্যন্ত ভালো ও ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন৷ আশা প্রকাশ করেছেন এর ফলাফল হবে ইতিবাচক৷ আলোচনা হয় কী কী ইস্যু নিয়ে? ভারতের তরফে মূলত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপার থেকে জঙ্গি হামলা বন্ধ করা, মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার এবং দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির স্বার্থে ভারতকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেবার দাবি জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী৷
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের হেরাটে ভারতীয় কনসুলেটে জঙ্গি হামলার বিষয়টিও ওঠে বলে জানা গেছে৷ কারণ আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ঐ জঙ্গি হামলার জন্য অভিযোগের আঙুল তোলেন পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈয়বার দিকে৷ কাজেই পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিরা বিদেশেও যে ভারতকে নিশানা করছে সে বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, ১৯৯৯ সালে তিনি ও তৎকালীন বিজেপি প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী যেখানে শেষ করেছিলেন, সেই সূত্র থেকেই আবার তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুরু করতে চান৷ দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহ একটা ধারাবাহিক আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে৷ তাই ভবিষ্যতের জন্য দরকার একটা অনকুল পরিস্থিতি গড়ে তোলা৷ নওয়াজ শরিফ মোদীকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি তা গ্রহণ করেন৷ তার আগে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবস্তরে বৈঠক হবে৷ কাশ্মীর নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি৷ উল্লেখ্য, এবারের দিল্লি সফরে নওয়াজ শরিফ কাশ্মীরের বিচ্চিন্নতাবাদী হুরিয়াত সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেননি৷
বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিস্তা জল বণ্টন চুক্তি এবং স্থলসীমা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের দিকে মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ মোদী তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে বলা হয়েছে৷ শিরীন চৌধুরিও মোদীকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান৷
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে বৈঠকে ওঠে ভারতীয় মৎসজীবীদের ইস্যু, যাঁরা শ্রীলঙ্কার জলসীমা অতিক্রম করার অভিযোগে হামেশাই হয়রানির শিকার হচ্ছে৷ অথচ এটা তাঁদের রুজি-রোজগারের বিষয়৷ শ্রীলঙ্কা সরকারকে এ বিষয়ে আরো মানবিক হবার অনুরোধ জানানো হয়৷ দ্বিতীয়ত, তামিলদের অধিকার হস্তান্তরের জন্য শ্রীলঙ্কা সংবিধানের ১৩নং সংশোধনের কথাও বলা হয়৷ তামিল ইস্যুতে ভারতের তামিল রাজনৈতিক দলগুলি যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সেটা মাথায় রেখে একটা জাতীয় সমঝোতার পথে এগিয়ে যাবার দাবিও জানানো হয়৷