তিস্তার পানি নিয়ে বরফ গলতে পারে
৯ মার্চ ২০১৫
কথাটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদারের৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মমতার কারণেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু অমীমাংশিত ইস্যু এতদিন আটকে ছিল৷ আশা করছি এবার তার বরফ গলবে৷''
ডিডাব্লিউ: মোদী-মমতার বৈঠকে বাংলাদেশের আশান্বিত হওয়ার কী কোনো কারণ আছে?
ড. শান্তনু মজুমদার: আশা করাই যায়৷ তবে এই বৈঠকে বাংলাদেশ যে প্রধান ‘অ্যাজেন্ডা', তা কিন্তু নয়৷ আসলে গত নির্বাচনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে এখন বেশ চাপে আছেন৷ শুধু তিনি নিজে নয়, চাপে আছে তাঁর তৃনমূল কংগ্রেসও৷ কয়েকদিন আগে সিপিএম কলকাতায় কয়েক লাখ মানুষের সমাবেশ করেছে মমতার বিরুদ্ধে৷ তাই তিনি মূলত এই বৈঠকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে সংহত করতে চাইছেন৷ এছাড়া রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল ঋণের বোঝাটাও লঘু করার আর্জি জানিয়েছেন মমতা৷
তাহলে বাংলাদেশের আশার জায়গা কোথায়?
প্রধান ‘অ্যাজেন্ডা' না হলেও বাংলাদেশের বিষয় যে আসবে বা এসেছে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়৷ তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত চুক্তি – এ সব বিষয়গুলি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাছাড়া এ বিষয়গুলোতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহ আছে৷ তাই মোদী চাইবেন মমতার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে৷
মমতা কী এ সব বিষয়ে ইতিবাচক হবেন?
মমতা আগের অবস্থানে নেই৷ গত মাসেই তিনি ঢাকা ঘুরে গেলেন৷ তখন তাঁকে ইতিবাচকই মনে হয়েছে৷ তিনিও হয়ত তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের দাবির প্রতি নরম হয়েছেন৷
তাঁর এই অস্থান পরিবর্তনের কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
মমতা নির্বাচনের সময় তিস্তার পানি নিয়ে ইতিবচাক হতে পারেননি, মূলত পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা এলাকার ভোটারদের মনোভাবের কারণে৷ কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই৷ সে সময় বাংলাদেশ বিরোধিতা তাঁকে ভোটের বাক্সে সুবিধা করে দিয়েছে৷ কিন্তু এখন বাংলাদেশের সঙ্গে নানা কারণেই তাঁর সুসম্পর্ক প্রয়োজন৷ তাই মনমোহনের সময় তিনি ‘না' বললেও, এখন আশা করি ‘হ্যাঁ' বলবেন৷ তিনি বাংলাদেশের ‘গুডবুক'-এ থাকতে চাইবেন৷
নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান কী হতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী মোদী চাইবেন কমপক্ষে তিস্তার পানির ব্যাপারে মমতার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে৷ কারণ তিনি বাংলাদেশ সফরে আসার আগে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চত হতে চান৷ তিনি যে প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশকে দিয়েছেন, তা রক্ষায় এই বৈঠকের মাধ্যমেই মোদী তাঁর ‘হোমওয়ার্ক'-টি সেরে ফেলতে চাইছেন বলে আমি মনে করি৷
তাহলে কি তিস্তার পানি নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারি?
হ্যাঁ৷ আমি তো মনে করে মোদী-মমতার এই বৈঠকেই বরফ গলবে৷ সময়টি বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ঠ অনুকূলে৷