‘ম্যার্কেল ব্যর্থ হতে বাধ্য'
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬জন ম্যাককেইন রাজনীতিতে আছেন বহুদিন৷ আরিজোনা রাজ্যের রিপাবলিকান রাজনীতিক বছরে একবার ইউরোপীয়দের তাঁর মতামত জানিয়ে থাকেন সুস্পষ্ট ভাষায় – সেই সঙ্গে থাকে নিরাপত্তা নীতি সংক্রান্ত সাবধানবাণী৷ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তাঁর আবির্ভাব ধীরে ধীরে আন্তঃ-অতলান্তিক কিংবদন্তিতে পরিণত হচ্ছে৷ ম্যাককেইনকে সাধারণত প্রশংসা করতে শোনা যায় না: এ বছর কিন্তু তিনি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে তাঁর নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেছেন৷
ম্যার্কেলের মিত্রের সংখ্যা কমছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ খবর পৌঁছেছে যে, জার্মান চ্যান্সেলর এখন চাপের মুখে – যার ফলে তিনি তাঁর চ্যান্সেলরত্ব হারাতে পারেন; অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন নির্ভরযোগ্য মিত্র হারাবে৷ ম্যার্কেল এ বছর মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে দেখা দেননি বটে, কিন্তু মিউনিখে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, শুধু আলোচনা কেন, সম্ভবত নির্ধারিত হয়েছে৷
মিউনিখের মুক্তমঞ্চে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর দেশ জার্মানির উদ্বাস্তু নীতি প্রত্যাখ্যান করে৷ ফ্রান্স আর অতিরিক্ত উদ্বাস্তু নিতে রাজি নয় এবং ম্যার্কেল যে একটি বিশেষ ফর্মুলা অনুযায়ী অপরাপর ইইউ দেশকে উদ্বাস্তু নিতে দায়বদ্ধ করাতে চান, প্যারিস তার বিরোধী৷ কাজেই উদ্বাস্তু প্রসঙ্গে ম্যার্কেলের পাশে যে একজন শক্তিশালী মিত্র থাকবে, সে আশায় জল ঢালা হয়ে গিয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন শীর্ষবৈঠকে ম্যার্কেলের পরাজয় অবধারিত৷
উদ্বাস্তু সংকট ইতিমধ্যেই ম্যার্কেলের রাজনৈতিক ইন্ধন এমনভাবে শুষে নিয়েছে যে, তিনি বহুক্ষেত্রে তাঁর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন – সকলে হয়ত যা খেয়াল করেননি৷ দু'বছর আগে রাশিয়া যখন ক্রাইমিয়া দখল করে ও পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র ও যোদ্ধা দিয়ে সাহায্য করতে শুরু করে, তখন জার্মানি সংকট সমাধানে কূটনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে আগ না বাড়িয়ে জার্মানদের পথ নির্দেশ করার সুযোগ দিয়েছিল৷
বিগত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র নীতি বদলে ইউক্রেন সংকটে ক্রমেই আরো বেশি সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ছে – নীরব কূটনীতির মাধ্যমে মিন্সক চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে, সেই উদ্দেশ্যে রুশিদের সঙ্গে গোপন আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে৷ তাঁর প্রেসিডেন্সি সমাপ্ত হওয়ার আগে ওবামা যদি আরো একটি কূটনৈতিক সাফল্য দেখাতে পারেন, তো ক্ষতি কি? কিন্তু আর একটি কারণ হলো: বিগত কয়েক মাসে জার্মান-ইউক্রেনীয় কূটনীতি তার গতিবেগ হারিয়েছে৷
ম্যার্কেল দুর্বল হলে মস্কোর আপত্তি নেই
একটি যোগসূত্র স্পষ্ট: জার্মানিতে যত বেশি উদ্বাস্তু আসবে, ম্যার্কেলের চ্যান্সেলরশিপ অন্যান্য বিষয়ে ততই আরো কম শক্তি ব্যয় করতে পারবে৷ এমনকি একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্র নিয়েও গবেষণা চলেছে: পুটিন যে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধীদের উপর বিমান হানা চালাচ্ছেন, তার ফলে আরো বেশি মানুষ জার্মানিতে পালাচ্ছেন, ফলে ম্যার্কেল আরো দুর্বল হয়ে পড়ছেন এবং হয়ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন৷
যা প্রমাণ করবে যে, পুটিন সুদক্ষ পুতুলনাচিয়ের মতো উদ্বাস্তুর স্রোত এদিক সেদিক বইয়ে দিয়ে স্বয়ং চ্যান্সেলরদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন৷ অপরদিকে আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ং ইউরোপীয় ধারণা তথা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের চ্যান্সেলরশিপের ক্ষতিসাধন করছে৷
সেই ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ঢেউ অনুভব করা গেছে মিউনিখের বলরুমে৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ম্যার্কেলের উদ্বাস্তু নীতির সবচেয়ে বড় সমালোচক হলেন বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার৷ তিনি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যার্কেলের বিশ্বাসভঙ্গ করে মস্কোয় গিয়ে পুটিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ সেনেটর জন ম্যাককেইনের কাছে তা এতটাই অপ্রীতিকর যে, তিনি শনিবার মিউনিখে সেহোফারের আমন্ত্রিত নৈশভোজ বর্জন করেছেন৷