ম্যার্কেল-মাক্রোঁর মধ্যে ফারাক অনেক
২০ এপ্রিল ২০১৮আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও এমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্যে হয়ত খুব বেশি মিল নেই৷ ম্যার্কেলের রাজনৈতিক জীবন এখনও শেষ হয়নি৷ কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, কেরিয়ার প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ আর এ কথাটা তিনি নিজেও জানেন৷ অন্যদিকে মাক্রোঁ ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবেমাত্র তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছেন৷ প্রাণশক্তিতে ভরপুর তিনি৷ মাক্রোঁ চান অর্থনাতিকভাবে সমৃদ্ধ জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দেশগুলির পাশে থাকুক৷ বলা বাহুল্য, সেই তালিকায় ফ্রান্সও আছে৷
২০০৫ সাল থেকে ম্যার্কেল তাঁর দলকে মূলত কেন্দ্র থেকেই চালিত করেছেন৷ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নীতি থেকে সরে এসেছেন৷ শরণার্থীদের আগমনের মধ্যে উদার মানসিকতা দেখিয়ে দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন৷ ইইউ-এর অন্যান্য দেশকে ব্যয়সংকোচনের পরামর্শ দিয়েছেন৷ বারবার তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইইউ-র সমস্যা দূর করতে আরও এক দফা তাঁর ক্ষমতায় থাকা দরকার৷ এভাবেই ম্যার্কেল নেতৃত্ব দিতে চান, যা তিনি শুরু থেকেই করে এসেছেন৷
আর সেখানেই সমস্যা৷ নতুন এক অভিন্ন ইউরোপ গঠনের ব্যাপারে মাক্রোঁর রয়েছে গঠনমূলক স্পষ্ট এক ভাবনা, যা ম্যার্কেলের নেই৷ তাছাড়া তাঁর ভাবনা থাকলেও, সেটার বাস্তবায়ন করতে ম্যার্কেলকে বেগ পেতে হবে৷ মাক্রোঁ এক ধরনের অর্থনৈতিক সাম্য চান যাতে ইউরোপের ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলিকে সাহায্য করবে৷ ম্যার্কেলের রক্ষণশীল দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন (সিডিইউ) মাক্রোঁর এই ভাবনার তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ এমনকি সামাজিক গণতন্ত্রী অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎসও এখানে ম্যার্কেলকেই সমর্থন করেছেন৷
শুধু তাই নয়, ম্যার্কেল এটাও জানেন যে, সিডিইউ সদস্যদের পাশাপাশি তাদের সহযোগী বাভেরিয়ান দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়নের (সিএসইউ) ইইউ নিয়ে নানা আপত্তি রয়েছে৷ ইইউ-র সংস্কারের প্রশ্নে ম্যার্কেল বরাবরই তাঁর দলের থেকে বেশি উদার৷ ২০০৫ সালে গ্রিসকে তৃতীয়বার আপৎকালীন ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে জার্মান পার্লামেন্টে ভোট হয়৷ সে সময় প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন ৬৩ জন রক্ষণশীল সদস্য৷ বলা বাহুল্য, এই মুহূর্তে এ ধরনের বিদ্রোহ জার্মানির জোট সরকারের পতন ডেকে আনতে পারে৷ ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন চ্যান্সেলর সেই পরিস্থিতি এড়াতেই চাইবেন৷ তার সঙ্গে ইইউ-এর ব্যাপারে সন্দিহান বিরোধী দুই দল উদারপন্থি মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি) ও চরম দক্ষিণপন্থি জার্মানির জন্য বিকল্পের (এএফডি) বিরোধিতা তো রয়েইছে৷
সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিবর্তন আসছে৷ ম্যার্কেল বুঝতে পারছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তাঁর প্রভাব ক্রমশ কমছে৷ কিন্তু মাক্রোঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা জার্মান পার্লামেন্টে ম্যার্কেলের নেই৷ তাছাড়া ইইউ নিয়ে সন্দিহান জনতারও তাতে সমর্থন থাকবে না৷ এই পরিস্থিতিতে মাক্রোঁ ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছেন৷ বার্লিন তার পরিকল্পনায় কী মত দেয় সেটা জানার জন্য তিনি এখনও পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে অপেক্ষাও করছেন৷
তবে একটা কথা পরিষ্কার যে, ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইইউকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন মাক্রোঁ৷ তাই ম্যার্কেলের পক্ষে তাঁকে অনুসরণ করা বা অনুসরণ করতে বাধ্য হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না৷ ম্যার্কেল নিজে ইইউ নিয়ে যত্নবান৷ কিন্তু সরকারে সংখ্যার জোর না থাকায় তাঁর এগিয়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ এ কারণে তাঁর হতাশা থাকতে পারে৷ এবং শেষ পর্যন্ত তিনি মাক্রোঁকে অনুসরণ করতে রাজি নাও হতে পারেন৷
ম্যার্কেলকে আগে কখনও এতটা দুর্বল লাগেনি৷ আসলে তিনি কখনই জার্মান জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেননি ইইউ নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা কী৷ হয়ত তারই মূল্য দিচ্ছেন ম্যার্কেল৷ তাই এখন জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে৷
ইয়েন্স টুরাও/পিএস