1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যাদের কাজের ঠিক নেই, ঠিক নেই মজুরি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ মে ২০১৮

বাংলাদেশে গৃহকর্মী, দিনমজুর বা সাধারণ শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষা বা সুনির্দিষ্ট মজুরি৷ পোশাক কারখানাসহ ৫৪ ধরনের শিল্পে সরকার সর্বনিম্ন মজুরি বেঁধে দিলেও শ্রমিকদের বিশাল একটি অংশ অনিশ্চিত জীবন যাপন করে৷

https://p.dw.com/p/2wx42
Symbolbild Bäuerin auf den Philippinen
ছবি: AFP/Getty Images/R. Gacad

বিবিএসের হিসাব দেখলে বাংলাদেশের শ্রমিক ও শ্রমশক্তি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৭ লাখ৷ এ শ্রমশক্তির মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত৷ বাকি ২৭ লাখ বেকার৷

আর এই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোনো মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ৷ আর ১ কোটি ৬ লাখ  আছেন দিনমজুর, যাঁদের কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই মজুরির কোনো নিশ্চয়তা৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র মতে তাঁরাও বেকার৷

বিবিএস-এর আরেক হিসাব বলছে, বাংলাদেশে এখন ২৫ লাখ গৃহকর্মী বা গৃহশ্রমিক আছেন৷ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে এমন শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার, যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছর৷ এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মেয়েশিশু৷

‘গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের অধীনে আনার দাবি জানাচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি’

ঢাকার কলাবাগানের গৃহকর্মী হোসনে আরা৷ বয়স ৩০ বছর৷ তিনি অবশ্য স্থায়ীভাবে কোনো বাসায় কাজ করেন না৷ একাধিক বাসায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ‘ছুটা' কা করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে হোসনে আরা বলেন, ‘‘প্রতিটি কাজের জন্য পাই ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা৷ তাতে মাসে ৬ হাজার টাকার মতো আয় হয়৷ কিন্তু কাজ করলে  মজুরি আছে, কাজ না করলে নাই৷''

অন্যদিকে এক বাসায় যাঁরা স্থায়ীভাবে কাজ করেন, তাঁদের থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বেতন দেয়া হয় সামান্যই৷

বাংলাদেশে গৃহশ্রমিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও তাঁদের বেতন কাঠামো, নিয়োগ এবং কর্মঘণ্টা নিয়ে কোনো আইন হয়নি৷ গৃহকর্মীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত কাজী সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের অধীনে আনার দাবি জানাচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে৷ আমরা গৃহকর্মীদের নিয়েগপত্র, বেতনকাঠামো এবং কর্মঘণ্টার দাবি জানিয়ে আসছি৷ সরকার একটা কমিটিও করেছে৷ কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি৷ আরেকটা সমস্যা হচ্ছে গৃহকর্মীদের নানা ক্যাটাগরি আছে৷ সেই ক্যাটাগরি নির্ধারণ দরকার৷''

‘আমাদের মজুরি সরকার নির্দিষ্ট করে দিলে ভালো হয় কিন্তু এটা আমরা কার কাছে বলবো?

 বাংলাদেশে দিনমজুরদের মধ্যে কৃষি শ্রমিক যেমন আছেন, তেমনি নির্মাণ, শিল্প, পরিবহন, উন্নয়নসহ নানা খাতে দিনমজুর শ্রমিক কাজ করেন৷ তাঁদের প্রতিদিনের কাজের জন্য সকালে অপেক্ষা করতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁরা কাজ পান৷ তবে শহরাঞ্চলে দালালের ওপর নির্ভর করতে হয়৷ ঢাকায় এখনো দিনমজুর শ্রমিকের হাট আছে৷ প্রতি সকালে এই হাট বসে৷ যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী এই হাট থেকে শ্রমিক নিয়ে যান৷ এখানে মজুরির ঠিক নেই, ঠিক নেই কর্মঘণ্টা৷

সেরকমই একজন শ্রমিক আমান উল্লাহ৷ থাকেন ঢাকার মান্ডা এলাকায়৷ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাটিকাটা, পাইপ লাগানো থেকে শুরু করে আরো অনেক কাজ করি আমি৷ কোনোদিন কাজ পাই আবার কোনোদিন পাই না৷ সাধারণত দিনে ৫শ' টাকা মজুরি ও খোরাকি দেয়৷ এর কম-বেশিও হয়৷ নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর৷ আর কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট নয়৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের মজুরি সরকার নির্দিষ্ট করে দিলে ভালো হয়৷ কিন্তু এটা আমরা কার কাছে বলবো? আর আমরা বললেই কি সরকার তা করবে!''

কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকদের বড়  একটি অংশই দিন মজুর৷ আবার যাঁরা মাস বা বছর চুক্তিতে কাজ করেন, তাঁদেরও মৌখিক চুক্তিতেই কাজ  করতে হয়৷ ফলে চুক্তি লঙ্ঘন করলে তাঁরা কোনো প্রতিকার পান না৷ বাংলাদেশে পরিবহন খাত অনেক শক্তিশালী হলেও চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের বড় একটি অংশ মজুরি পান দিন অথবা ট্রিপ ভিত্তিতে৷ আর প্রাইভেট কার চালকরা মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কাজ করলেও বেতন ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে৷ কিন্তু তাঁদের কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট নয়৷ এসব খাতে কিছু অলিখিত নিয়ম থাকলেও তা শ্রমিকবান্ধব নয়৷

‘‘আমাদের শ্রম শক্তির বিশাল একটি অংশ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করেন ফলে তাঁরা জাতীয় মজুরি নীতির মধ্যে নেই’

আর নারীদের ঘরের কাজের তো কোনো অর্থনৈতিক মূল্যায়নই নেই৷ অ্যাকশন এইডের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে নারীরা ঘরের যে কাজ করেছেন তা ওই বছরের জিডিপির ৭৮ থেকে ৮৭ ভাগ৷ ওই সময়ের হিসেবে গ্রহণযোগ্য মূল্য পদ্ধতিতে তার মূ্ল্য হতো  ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা৷

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড, নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের শ্রম শক্তির বিশাল একটি অংশ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করেন৷ ফলে তাঁরা জাতীয় মজুরি নীতির মধ্যে নেই৷ এ কারণে সেখানে শ্রম শোষণের ঘটনা ঘটে৷ তাঁদের ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা মানা হয় না৷ শ্রম আইনের কোনো সুবিধা পান না তাঁরা৷ তবে এটা শ্রম আইনের অধীনে আনাও অনেক কঠিন, কারণ, মনিটর করার জন্য যথেষ্ট জনশক্তি নেই৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘এখন সম্ভব না হলেও কমপক্ষে একটি নীতিমালা থাকা দরকার, যা সবাই অনুসরণ করবেন৷ আর আমি মনে করি, বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে, তাই দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনেই তাঁদের শ্রম আইনের অধীনে আনতে হবে৷'' 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান