যুদ্ধাপরাধ মামলায় বিচারকের ওপর সরকারের চাপ
১০ ডিসেম্বর ২০১২ঢাকার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথনে দেখা গেছে চলতি ডিসেম্বর মাসেই যুদ্ধাপরাধ বিচারের অন্তত একটি মামলার রায় দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে৷ এতে তিনি বলেন, ‘‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, তারা একটা রায় চায়৷''
আন্তর্জাতিক আইনজীবী ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে কথোপকথনে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চান বিচারপতি নাসিম৷ উল্লেখ্য, এই বিচারক সম্প্রতি দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার বিরুদ্ধেও রুল জারি করেছেন৷ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি লিখেছেন অলিউল্লাহ নোমান, যিনি উচ্চ আদালত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার দায়ে একবার জেলও খেটেছেন৷ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁর এই প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কী? জবাবে নোমান বলেন, ‘‘আমাদের আসল উদ্দেশ্য হলো বিচার বিভাগের স্বচ্ছতাটা মানুষের সামনে তুলে ধরা৷ বিচার বিভাগের কাজ হচ্ছে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করা৷ তবে আমাদের কাছে যখন এই তথ্যগুলো আসলো তাতে মনে হলো যে এখানে ন্যায় বিচার হচ্ছে না৷ তাই আমরা এটি জনগণের আদালতেই তুলে ধরলাম৷''
বিচারক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে যে জেল জরিমানা আসতে পারে সেই বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত রয়েছেন অলিউল্লাহ নোমান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার সম্পাদকের সঙ্গে আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি৷ তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে, এর পরিণতি কী হতে পারে৷ আমি তাঁকে বলেছি যে, একটি আইন আছে যদি কেউ ট্রাইবুনালের কাজে বাধা প্রদান করে তাহলে তার শাস্তি হতে পারে৷ এখন তারা যদি মনে করে এই প্রতিবেদন তাদের কাজে বাধা তাহলে তারা আমাকে এক বছরের শাস্তি দিতে পারে৷ তবে আমাদের দৃষ্টিতে এই প্রতিবেদন তাদের কাজে কোন বাধা নয়৷'' অলিউল্লাহ নোমান ২০১১ সালে প্রণীত জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ আইন এর বরাত দিয়ে বলেন, ‘‘এতে বলা হয়েছে যদি জনস্বার্থ থাকে তাহলে তাকে আইন সুরক্ষা দেবে৷ তো আমার মনে হলো যে এটা জনস্বার্থের ব্যাপার৷ কারণ কোন মানুষ যখন বিচারকের চেয়ারে বসেন তখন সেখানে জনস্বার্থ জড়িত থাকে৷''
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি৷ উচ্চ আদালতের রীতি অনুযায়ী মামলার বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলা অনুচিত বলে জানান সাংবাদিক নোমান৷ এমনকি দি ইকনোমিস্টের মামলাতেও বিচারপতি নাসিম বলেছেন যে, বিচারকরা মামলার বিষয় নিয়ে স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন না৷
তবে বিচারকের কথোপকথনে আড়ি পাতার বিষয়টি কতটুকু বিধিসম্মত, সেটি নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে নানা মহলে৷