যোগাযোগের মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক, চ্যাট
২ জানুয়ারি ২০১২শোয়ারৎস্যার ব্রেট – ব্ল্যাক বোর্ড৷ এই বোর্ডে হাতে লিখেই অনেক ধরণের সাহায্য চায় ছাত্র-ছাত্রীরা৷ তার মধ্যে একটি হল ২১ বছর বয়সের এক ছাত্রী থাকার জন্য একটি রুম খুঁজছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার পার্টি কবে তা জানানো হয়েছে এবং কোন থিয়েটারে কী দেখানো হচ্ছে তাও তুলে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে৷ যোগাযোগ করা হচ্ছে হাতে লিখে, বোর্ডের মাধ্যমে৷ এই বোর্ডে ইন্টারনেট এবং ফেসবুকের স্থান নেই৷ বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী যারা এখনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দক্ষ নয় তাদের জন্য এই কালো বোর্ডই হল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম৷
কলম্বিয়ার ছাত্রী ভিভিয়ানা উসমে৷ তার বন্ধু-বান্ধবীদের সে খুঁজে পেয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্টে৷ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে দপ্তর, যেখানে ক্লাস হয় সেখানেই তাদের পরিচয়৷ প্রথমে সেখানে যেতে হবে, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এরপর ভর্তির বিষয়গুলো আসবে৷ প্রায় একবছর ধরে ভিভইয়ানা জার্মান ভাষা শিখেছে, প্রয়োজনীয় কগজপত্র গুছিয়েছে৷ উসমে জানাল, ‘‘শুরুতে বেশ কষ্ট হয়েছে৷ কিছুই চিনি না, লজ্জায় ছোট হয়ে থাকতাম৷ তখন শুধু কলম্বিয়ানদেরই চিনতাম, জানতাম৷ তবে ধীরে ধীরে অন্য বন্ধু-বান্ধবীদের খুঁজে পেয়েছি৷ আমাদের সবার জার্মান ভাষার অবস্থা একই রকম৷ আমরা সবসময়ই নিজেদের প্রশ্ন করতাম কীভাবে নিজেদের সাহায্য করা যায়?''
ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একে অপরকে সাহায্য করা
একে অপরকে সাহায্য করা– ইদানিং তা ফেসবুকের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে৷ কোন সমস্যা হলেই সামাধান চাওয়া হয় ফেসবুকের পাতায়৷ আর গ্রুপ স্টাডিজের জন্য রয়েছে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম৷ কারো কোন প্রশ্ন থাকলে তা ভার্চুয়াল পিনবোর্ডে তুলে দেয়া হয়৷ এরপর শুধু অপেক্ষার পালা৷ এছাড়া রয়েছে দল বেঁধে সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য প্ল্যান তৈরি করা, রাতে দল বেঁধে কোথাও খেতে যাওয়া৷ সবকিছুই করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷
ফরেন স্টুডেন্টস সংস্থা বা স্টুডিয়েনকলেগে কাজ করছেন ক্রিস্টিন হর্টউইস টুর্মার৷ তিনি ক্লাসও নেন৷ ২০ বছর আগেও তিনি ভাবেননি যে ইন্টারনেট তার কাজ-কর্মকে এত প্রভাবিত করবে৷ ইন্টারনেট যখন নতুন আসল তখনও তিনি ইন্টরনেটের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন৷ ক্রিস্টিন,‘‘ শুরুতে আমি দেখতে চেয়েছি ইন্টারনেট কী করতে পারে৷ আমি তখন টুকটাক ইন্টারনেট ব্যবহারও করতাম৷ আমি যদি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন করতাম কার বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে তখন কুড়ি জনের মধ্যে দুজন হাত তুলতো৷ আজ পুরোপুরি উল্টো৷ কুড়ি জনের মধ্যে হয়তো একজন আছে যার ইন্টারনেট সংযোগ নেই৷''
১৯৯২ সাল থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডিয়েনকলেগে ক্রিস্টিন জার্মান ভাষা শেখান৷ তখন থেকেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে৷ এর কিছুদিন পরেই সবকিছু নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ইন্টারনেটের ওপর৷ ক্রিস্টিন আরো জানান,‘‘ এখন ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পাঁচ বছর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট ল্যাবগুলো আমরা ঘুরিয়ে দেখাতাম, কোথায় কী রয়েছে, কোনটা কীভাবে কাজ করে তা শেখাতাম এখন আর তার প্রয়োজন নেই৷ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একটি ফেসবুক রুম৷ এখন এর মাধ্যমেই ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে৷ আমাকে কিছুই করতে হচ্ছে না৷''
বাংলাদেশি ছাত্রী শারমিন রেজা
শুরুতে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু নিজেদের মধ্যে মেলামেশা করতো৷ জার্মান ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে খুব বেশি মিশতো না৷ পড়াশোনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয় বরং কিছুদিন পর হয়তো যোগাযোগ হত৷ স্পোর্টস রুমে, গ্রুপ স্টাডিজে অথবা কোন সেমিনারে৷ ফ্রাঙ্কফুর্টে অনেক বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে৷ বাংলাদেশের ছাত্রী শারমিন রেজা জানান,‘‘ আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর নাম কাদিমা, সে মরক্কো থেকে এসেছে৷ এরপর সোলমা, সে আজারবাইজানের এবং তারপর ঝুপি৷ ঝুপি এসেছেন ইন্দোনেশিয়া থেকে৷''
বিদেশি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও শারমিন রেজা ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে পছন্দ করেন৷ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে রয়েছে তার নেটওয়ার্ক৷ সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে এভাবেই৷ শারমিন আরো বললেন,‘‘ বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গেও আমার পরিচয় হয়েছে এখানে৷ আমার স্বামী আগে এখানে পড়াশোনা করেছেন৷ তখন অনেক বন্ধু ছিল তাঁর৷ আমিও তাদের বেশ ভালভাবেই চিনি৷ আমরা সবাই একই দেশ থেকে এসেছি৷ তাই যোগাযোগও এখন অনেক গভীর৷''
তবে তার মানে এই নয় যে দেশে থাকা বন্ধু-বান্ধবীদের ভুলে যাওয়া হয়েছে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে৷ যে যতদূরেই বসে থাকুক না কেন সেটা ৯ মাইল হোক আর ৯ হাজার মাইল হোক তাকে কাছে এনে দিচ্ছে ইন্টারনেট, ফেসবুক, চ্যাট এবং এসএমএস৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক